ফকিরাপুলে ক্যাসিনোতে অভিযান : ১৪২ নারী-পুরুষ আটক
রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় ইয়ংমেন্স ক্লাবের নিষিদ্ধ জুয়ার কেসিনোতে অভিযান চালিয়েছে র্যাব। এসময় ওই ক্যাসিনোর ভেতর থেকে ১৪২ জন নারী-পুরুষকে আটক করা হয়। বুধবার বিকেলে শুরু হয় অভিযানটি। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।
অভিযানের আগ থেকেই ক্লাবটি ঘিরে রাখেন র্যাবের সদস্যরা। তারা দুপুর থেকে সেখানে কাউকে ঢুকতে এবং বের হতে দেয়নি।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, অভিযানের সময় ভেতরে থাকা এবং ক্যাসিনোতে জুয়া খেলা অবস্থায় ১৪২ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, এই ক্লাবে গত আট মাস ধরে অবৈধ আসর বসছিল। এ সময় আমরা দেখি- ক্লাবের নিচতলায় যন্ত্রের মাধ্যমে জুয়া খেলা (ক্যাসিনো) চলছে। এছাড়া জুয়া খেলার ফাঁকে ফাঁকে মদ পান হচ্ছে।
তিনি জানান, যারা এই ক্লাবে এসেছেন তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আটক ব্যক্তিদের মদ পানের লাইসেন্স নেই। এমনকি ইয়াং মেন্স ক্লাবেরও মদ বিক্রির লাইসেন্স নেই।
অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে যুবলীগ নেতা আটক
ওই ক্যাসিনোতে অভিযানের পরই অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করেছে র্যাব। বুধবার রাত ৮টা ২৫ মিনিটে তাকে তার গুলশানের বাসা থেকে আটক করা হয়।
এসময় খালেদ মাহমুদের কাছ থেকে লাইসেন্সবিহীন একটা পিস্তল জব্দ করা হয়। ওয়াল শোকেজ থেকে দু’টি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে ২০০টি করে মোট ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়। এছাড়া লোহার লকার থেকে ১০০০, ৫০০ ও ৫০ টাকার বেশ কয়েকটি বান্ডেল উদ্ধার করা হয়।
সেগুলো গোনার পর টাকার অংক দাঁড়ায় ১০ লাখ ৩৪ হাজার। এছাড়া ডলারেরও বান্ডেল পাওয়া যায়। টাকায় তা ৫/৬ লাখ টাকা হবে বলে র্যাব জানায়।
খালেদ মাহমুদের বাসা থেকে ত্রুটিযুক্ত দুটি অস্ত্রও (শটগান ও পিস্তল) জব্দ করা হয়।
উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠন যুবলীগের ছত্রচ্ছায়ায় রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ১০০টিরও বেশি জুয়াচক্র বা ক্যাসিনো চলছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে যুবলীগের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে যুবলীগ নেতারা। আমার কাছে সবার সব তথ্য আছে।’
এরপর গত শনিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় যুবলীগ নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় ক্যাডার চাঁদাবাজ বাহিনী গড়ে তুলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে সে। আমার সংগঠনে চাঁদাবাজ দরকার নেই।’
আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছে, রাজধানীতে যুবলীগের বিভিন্ন অপতৎপরতা চলছে। শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে ঢাকায় অন্তত ১০০টি ক্যাসিনো চলছে যুবলীগের তত্ত্বাবধানে। পুলিশের এই প্রতিবেদন পেয়ে যুবলীগের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, রাজধানীর সর্বত্র যুবলীগ নেতাদের ক্যাসিনো গড়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যেখানে নেপাল থেকে ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য মেয়ে পর্যন্ত আনা হয়েছে। ওইসব ক্যাসিনোর জন্য নিরাপত্তা প্রহরীও আনা হয়েছে নেপাল থেকে। দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তথ্য আছে, রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় যুবলীগ নিয়ন্ত্রিত ক্যাসিনো বার রয়েছে ছয়টি। এর সঙ্গে যুবলীগ দক্ষিণের প্রভাবশালী নেতাসহ অন্যরা রয়েছেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমার কাছে আরও তথ্য আছে, রাজধানীর সব সুউচ্চ ভবনের ছাদ দখল নিয়েছে যুবলীগের নেতারা। সেখানে ক্যাসিনো খোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগের সবার আমলনামা আমার হাতে এসেছে। আমি সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, গত শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়ও যুবলীগের প্রতি প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ যুবলীগের মহানগর উত্তর-দক্ষিণের প্রায় সব নেতা ঢাকায় ক্যাসিনো পরিচালনা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এর ভাগ যুবলীগের সবার পকেটে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে যুবলীগের মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনের বিষয়টি অবহিত হলে শেখ হাসিনা বলেন, চাঁদাবাজির টাকা হালাল করতে আমার জন্মদিন উপলক্ষে কর্মসূচি নিয়েছে যুবলীগ। আমি এসব দোয়া চাই না।
সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য আরও বলেন, যুবলীগের নেতারা চাঁদাবাজি করে কে, কত টাকার মালিক হয়েছে সব হিসাব আমার কাছে আছে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, যুবলীগ মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন গাড়ি অস্ত্র থাকে তার বহরে।
তিনি আরও বলেন, আমার দলে চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী দরকার নেই। এরা দলকে, রাজনীতিকে কিছু দেয় না। এরা দলের বোঝা। সংশোধন না হলে এ দেশে জঙ্গি যেভাবে দমন করেছি সন্ত্রাসী বাহিনীও সেভাবে দমন করব।
এআর/এসএইচএস/এমএস