নেটওয়ার্ক, কলড্রপ ভোগান্তিতে মোবাইল ব্যবহারকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৩৩ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মিরপুর আনসার ক্যাম্পের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন (ছদ্মনাম)। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা ৫১ মিনিটে তার বাংলালিংক নম্বরে এক আত্মীয় ফোন দেন। কিন্তু ফোন বন্ধ দেখায়। পরে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে সেই আত্মীয় শাহাদাতকে জানায় ফোন বন্ধ থাকার কথা। তবে ফোন বন্ধ ছিল না বলে জানান শাহাদাত।

মোবাইল অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্ক সমস্যা ও কলড্রপের কারণে শাহাদাতের মতো অনেকেই নিয়মিত এমন ভোগান্তিতে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি আগের তুলনায় নেটওয়ার্ক সমস্যা ও কলড্রপ বেড়ে গেছে। সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও টেলিটক - এ চার অপারেটরের গ্রাহকরাই নেটওয়ার্ক সমস্যা, কলড্রপ ও মানসম্মত সেবা থেকে বেশি বঞ্চিত। তবে ভোগান্তি থাকলেও মানুষ তুলনামূলক কম অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

শাহাদাত জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলালিংক ও গ্রামীণফোনের সিম ব্যবহার করি। যিনিই আমাকে কল দিচ্ছেন, তিনিই বন্ধ পাচ্ছেন। একাধিকবার কল দেয়ার পরে কিংবা একাধিক নম্বরে কল করার পর আমাকে পাচ্ছেন। দেখা হলে ফোনে পাচ্ছেন না বলেও জানান অনেকে। অথচ আমার ফোন বন্ধ থাকে না কখনই। কল করতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কলড্রপ হচ্ছে এবং কখনও কখনও কল ফেইলড, নেটওয়ার্ক বিজি দেখাচ্ছে। আমার দুই সিমে প্রায় একই সমস্যা।’

‘আগে কলড্রপ হলে সঙ্গে সঙ্গে এসএমএস আসত। আমরা কলড্রপের টাকা পেয়ে যেতাম। এখন আসে না’- অভিযোগ শাহাদাতের।

রাজধানীর বারিধারার বাসিন্দা তানভীর কবির তনু বাংলালিংক ও গ্রামীণফোনের সিম ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, ‘এক বছর ধরে নেটওয়ার্ক সমস্যা ব্যাপক বেড়েছে। এ জন্য কলড্রপও বেড়ে গেছে। গ্রামে বাবা-মার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে গেলে, এক টানা এখন আর কথাই বলতে পারি না। আগে শহরে কথা বলতে নেটওয়ার্কের সমস্যা হতো না। এখন শহরেও নেটওয়ার্কের সমস্যা হচ্ছে। কলড্রপও বেড়ে গেছে।’

বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকলেও গ্রামীণফোনের অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না। এখন গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে কলড্রপের সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে জানান তিনি।

রবি, টেলিটক ও বাংলালিংকের সিম ব্যবহার করেন মিরপুর ৬০ ফিটের বাসিন্দা মুরাদ হুসাইন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জরুরি কথা বলছি অথচ হুট করে কল কেটে যাচ্ছে। তখন আমাকে আবার সেখানে কল করতে হচ্ছে। এটা খুবই বিব্রতকর।’

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে কলড্রপ হলে যে প্যাকেজটা (১০ সেকেন্ড, ৩০ সেকেন্ড) অ্যাক্টিভ থাকে, সেই প্যাকেজ অনুযায়ী বিল কেটে নেয়া হচ্ছে। কলড্রপ হলে সেই কেটে নেয়া অর্থ ফেরত দেয়ার বিধান থাকলেও তা দেয়া হচ্ছে না।’

কলড্রপ বেশি টেলিটকের

চলতি বছরের শুরুর দিকের [বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের বিটিআরসি হিসাব অনুযায়ী, কলড্রপে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে টেলিটক। ঢাকা বিভাগে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ, বরিশালে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ, রংপুরে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং খুলনায় ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কলড্রপ ছিল টেলিটকের। তবে বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২ শতাংশ বা তার কম কলড্রপ স্বাভাবিক।

তবে গ্রামীণ, রবি ও বাংলালিংকের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। তাদের কলড্রপের পরিমাণ ২ শতাংশের কম। এর মধ্যে গ্রামীণফোনে কলড্রপের পরিমাণ ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ পৌঁছেছিল রাজশাহীতে। তবে রংপুর বিভাগে সব অপারেটরই ভালো সেবা দিয়েছে।

বেশি অভিযোগ রবির বিরুদ্ধে
২০১৮ সালের ১ মে থেকে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করা অভিযোগের তথ্য রয়েছে বিটিআরসির কাছে। সে তথ্য অনুযায়ী, নেটওয়ার্কজনিত সমস্যায় সবচেয়ে বেশি রয়েছে রবি। তাদের বিরুদ্ধে এ সময়ে ৪০৭টি অভিযোগ জমা হয়েছে। এরপরই রয়েছে গ্রামীণফোন (১৬৯), বাংলালিংক (১৪৮) এবং সবশেষে টেলিকটের বিরুদ্ধে ১০৩টি অভিযোগ পড়েছে।

মানসম্মত সেবাজনিত অভিযোগও সবচেয়ে বেশি এসেছে রবির বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে ২০৯ অভিযোগ জমা হয়। তারপরের অবস্থানই গ্রামীণফোনের (৯৮), টেলিটক (৮০) এবং এ ক্ষেত্রে ভালো অবস্থান বাংলালিংকের (৩১টি)।

কলড্রপজনিত অভিযোগও রবির বিরুদ্ধে বেশি। তাদের বিরুদ্ধে এ সময় ৯টি অভিযোগ জমা পড়ে। এরপর ধারাবাহিকভাবে গ্রামীণফোনে ৯, বাংলালিংক ৫ এবং টেলিটকে ৩ অভিযোগ জমা পড়েছে।

টেলিটকে কলড্রপের পরিমাণ বেশি হলেও ব্যবহারকারীরা সেই হিসেবে অভিযোগ করেন না। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, টেলিটকে কলড্রপ বেশি হলেও তাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ এসেছে কম।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশন সৈয়দ তালাত কামালকে ফোন করা হলে, তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে বাংলালিংকের জনসংযোগ ও যোগাযোগ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক অঙ্কিত সুরেকা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি। সাধারণত এমন হলে তো কল সেন্টারে অভিযোগ আসে। কিন্তু আমার জানা মতে, এ রকম কোনো সমস্যা নেই।’

নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সব জায়গায় যে নেটওয়ার্ক একই রকম পাওয়া যাবে, জিনিসটা আসলে সেরকম নয়। নেটওয়ার্ক কাজ করে অন্য ডাইনামিকে। চলা অবস্থায় নেটওয়ার্ক একভাবে কাজ করবে। বসে থাকলে আরেকভাবে কাজ করবে। বসে থাকলে আশপাশের নেটওয়ার্ক থেকে যে সিগন্যাল পাচ্ছেন, হঠাৎ করে চলতে শুরু করলে তা বাধাগ্রস্ত হবে।’

দু-একটা ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে ঘটতে পারে। সেসব ঘটনা জানালে তারা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করেন বলেও জানান তিনি।

রবির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। টেলিটকের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পিডি/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।