আওয়ামী লীগ কখনও ধর্মের বিভাজনে বিশ্বাস করে না

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪৫ এএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কখনই ধর্মের বিভাজনে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি নিজেদেরকে নিজেরাই সংখ্যালঘু বলে অবহেলিত মনে না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সরকার অসৎ উদ্দেশ্যে দেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনই এতে বিশ্বাস করে না। বরং তারা মনে করে এই দেশ সকলের, এদেশে বসবাসকারী সকল ধর্মাবলম্বীদের।’

শেখ হাসিনা বুধবার বিকেলে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন, জন্মাষ্টমী উদযাপন উপলক্ষে দেশের সনাতনধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাংলার মাটিতে যেহেতু আমরা ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এক হয়ে বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কাজেই এখানে সকল ধর্মের সম্মান ও অধিকার থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালে যখন সকলে একসঙ্গে যুদ্ধ করেছে এক ভাইয়ের সঙ্গে অপর ভাইয়ের রক্ত মাটিতে মিশে গেছে সে রক্ততো কেউ ভাগ করতে যায়নি, এটা ভাগ হতে পারে না।’

এ সময় ভারতীয় শরণার্থী শিবিরে আশ্রিতদের কে হিন্দু বা কে মুসলমান সেটা দেখা হয়নি। আমরা সেটা ভুলব কীভাবে, বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে সংবিধান আমাদের দিয়েছিলেন সেই সংবিধানে তিনি কিন্তু সে কথাই বলে রেখেছিলেন। আমাদের যে চার মূলনীতি সেই মূলনীতিতে কিন্তু এ কথাটাই ছিল।’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে আমার একটা অনুরোধ থাকবে আপনারা নিজেরা নিজেদেরকে বারবার করে কেন সংখ্যালঘু সংখ্যালঘু বলেন, আমি জানি না।

তিনি প্রশ্ন করেন, আপনারা কি এই রাষ্ট্রের নাগরিক না? আপনারা কি এদেশের মানুষ না? এটা আপনার জন্মভূমি না? তিনি নিজেই এর উত্তরে বলেন, এটাতো আপনাদের জন্মভূমি। তাহলে নিজেরা নিজেরেকে ছোট করে সংখ্যালঘু করে দেখবেন কেন?

‘এখানে সকলের সমান অধিকার রয়েছে’ উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আপনারা জানেন আমার বাবার (বঙ্গবন্ধু) আদর্শ অনুসরণ করেই আমরা সকল পদক্ষেপ নিচ্ছি ।’

খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাতমানন্দা মহারাজ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, জন্মষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ দে, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দে, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পাল, জন্মষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ পালিতও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষকতা মানে ধর্মহীনতা নয়। ধর্ম নিরপেক্ষতার অর্থটাই হচ্ছে যার যার ধর্ম সে স্বাধীনভাবে পালন করবে।
তিনি বলেন, সংবিধানের চার মূলনীতিতে যে জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়েছিল সেটাও ছিল প্রতিটি ধর্ম, বর্ণ, জাতি যার যার নিজের অধিকার, সেই অধিকার নিয়ে তারা চলবে। সেটাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও বলে গিয়েছিলেন। আর যে কারণে বাংলাদেশে সকল ধর্মীয়রা এক হয়ে কাজ করতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ অথবা ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ বলে আমরা যে স্লোগান দিচ্ছি, আমরা আজকে কিন্তু তা প্রমাণ করেছি কারণ প্রতিটি অনুষ্ঠানই ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই কিন্তু উদযাপন করছে, যেটা আজকে আমরা করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা যেমন মসজিদভিত্তিক শিক্ষা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিয়েছি, সেখানে ধর্মীয় এবং প্রাকপ্রথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। একইসঙ্গে মন্দিরেও আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি এবং এটা আপনারা জানেন যে প্রতিটি উপজেলার মন্দিরে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু করে দিয়েছি।

সরকারপ্রধান বলেন, সারাদেশে ৬৪৫০টি মন্দিরভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিবছর এক লাখ ৯১ হাজার ২৫০ জনকে প্রাক, প্রাথমিক, বয়স্ক এবং ধর্মীয় গ্রন্থবিদ্যা শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা যেমন ইমামদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি সেই সাথে সাথে সারাদেশে পুরোহিত ও সেবায়েতদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ২৫ হাজার ৫৮১ সেবায়েত-পুরোহিত ও তিন হাজার ৪৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, খ্রিস্টধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন এবং বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন করে দিয়েছে।
এসব ট্রাস্টে সরকারের পক্ষ থেকে সিড মানি অনুদান হিসেবে প্রদানের উল্লেখ করে তিনি এসব কল্যাণ ট্রাস্টে যে যে ধর্মের সেই ধর্মের বিত্তবানদের ও অনুদান প্রদানের আহ্বান জানান।

এর ফলে এই ট্রাস্ট অসহায়, দরিদ্র এবং পীড়িত জনগণের কল্যাণে আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করে হিন্দু নারীদের উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রেও তার সরকার আইন করে দিয়েছে, এক্ষেত্রে সকল ধর্মের জন্যই এটা করে দেয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাছাড়া পূজা-পার্বনসহ সকল ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপনেও তার সরকার প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিল থেকে পৃথক অনুদান দিয়ে যাচ্ছে।

২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর মন্দির, গির্জাসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে হামলাকরে তা ভাঙচুর, পুরোহিত, পাদ্রি হত্যা এবং সাধারণের ওপর অত্যাচার করে দেশের মধ্যে অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বহুবার বিভেদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালিয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তাদের চরিত্রটাই ও রকম।

তিনি বলেন, অন্তত আওয়ামী লীগ ওই রকম ভাগ-বাটোয়ারা করে দেখি না। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই সকলেই উপযুক্ত হলে সমান সুযোগ পাবে, সেটাই আমরা নিশ্চিত করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে- এটাই ইসলামের শিক্ষা।’ তিনি এ সময় সুরা কাফিরুনের ’লাকুন দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন’ আয়াতেরও উদ্ধৃতি দেন।

শ্রীকৃষ্ণসহ অন্য ধর্মের অবতাররাও মানবকল্যাণের কথাই বলে গেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উৎসব উদযাপনের ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি যে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা দৃশ্যমান সেটাকেই সবথেকে বড় অর্জন হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

তিনি শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্য দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে সরকারের পাশাপাশি পূজা-পার্বনে নিজস্ব ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবসময় কঠোর রাখারও পরামর্শ দেন।

বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।