ভার্চুয়াল বিচারব্যবস্থা চালুর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
আদালতে আনার সময় ছিনতাই, মারামারি বা ঝামেলা এড়াতে আসামিকে কারাগারে রেখেই যাতে বিচার করা যায়, সেজন্য ভার্চুয়াল বিচারব্যবস্থা চালুর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশ দেন তিনি।
সভায় প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু নির্দেশনা দেন। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন।
ভার্চুয়াল কারাগারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন, প্রত্যেক কারাগারে ভার্চুয়াল সিস্টেম করতে হবে। যাতে বিচারক না গিয়ে বা অভিযুক্তকে আদালতে না এনে বিচার করা যায়। যেমন একজন ভয়ঙ্কর অপরাধী কারাগারে আছে। তাকে আদালতে আনা ঝুঁকির কিংবা নানা ধরনের ঝামেলা থাকতে পারে। তাকে ফিজিক্যালি (শারীরিক) বহন না করে বা বিচারক মহোদয় আদালতে বসেই ভার্চুয়ালি বিচার করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে বলেছেন তিনি। অনেকটা স্কাইপির মতো।’
প্রত্যেক কারাগারেই এই ভার্চুয়ালি বিচারের জন্য একটা আধুনিক সিস্টেম করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
গাড়ির লোড সিস্টেম কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিংয়ের নির্দেশ
লোড টেম্পারিং (নির্দিষ্ট ওজনের চেয়ে ট্রাক বা লরির বাড়তি মালামাল বহন) যাতে না করতে পারে, সে বিষয়ে সাবধান হতেও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘তিনি বলেছেন, গাড়ির লোড সিস্টেম সেন্ট্রালি মনিটরিং করতে হবে। যেখানে কেউ না থাকলেও অটো অপারেট হবে।’
এ বিষয়ে আরও নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘তাছাড়া অনেক সময় ট্রাক বানায় দুই ইঞ্চি বেশি বড় করে। তখন তারা বলে, কী করমু স্যার যাইতে (সরু সড়কে) পারতেছি না। তাইলে মেইন রোড দিয়া যাইগা? এরকম তারা চালাকি করে। প্রধানমন্ত্রীর কথা হলো, এটা যেন তারা না করতে পারে। এ জন্য ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। মোট কথা হলো, রাস্তা যেমন মানসম্পন্ন হবে, যানবাহনকেও একটা স্ট্যান্ডার্ডের মধ্যে আনতে হবে।’
যশোর-খুলনা সড়ক নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যশোর-খুলনা সড়কে কাজ হচ্ছে না, ডিলামি করছে বছরের পর বছর। আজকে তিনি আবার এটা নিয়ে মন্তব্য করেছেন এবং সড়ক বিভাগকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা তো হওয়া উচিত নয়। সড়কের কাজটা শেষ করেন। প্রধানমন্ত্রী এটাতে খুবই বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ।’
দুটি কার্গো বিমান কেনার আগ্রহ প্রধানমন্ত্রীর
আগের একনেক সভায় দুটো কার্গো বিমান কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের একনেক সভায়ও সেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
আলু রফতানির নির্দেশ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আলু তো আমরা খেয়ে শেষ করতে পারছি না, রফতানির ব্যবস্থা করেন। রাশিয়াতে একবার আমরা রফতানি শুরু করেছিলাম, পরে দেখা গেল আমাদের আলুতে এক ধরনের পোকা বা এ জাতীয় কিছু রয়েছে। ওদের বিচারে এটা গ্রহণযোগ্য ছিল না। এটাকে টার্গেট করে ভালো মানের গবেষণাগার বানান, যাতে করে আমরা ভালো মানের আলু রফতানি করতে পারি।’
প্রযুক্তি বিশ্ববিদালয়ে শিক্ষার্থী বাড়ানো যাবে না
একনেক সভায় ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এই প্রকল্প পাসের সময় প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তা তুলে ধরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, ‘এটা পাস হলো। কিন্তু সার্বিকভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কী পরিমাণ ছাত্র ভর্তি করবে, তা নির্দিষ্ট করা থাকবে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়তে না দিয়ে আমরা সংখ্যাটা নির্ধারণ করব। প্রয়োজনে যেসব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নাই, সেসব জায়গায় নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় করব।’
সেসময় সংশ্লিষ্ট সচিবরা জানান, তারা বসে একটা নীতিমালা করবেন। কোন বিশ্ববিদ্যালয় কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে, এরপর আর বাড়াবে না বলেও জানান শামসুল আলম।
এ ছাড়া প্রকল্পের মধ্যেই জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
পিডি/জেডএ/এমএস