দুদিন সংসদে যান এরশাদ, আপ্যায়ন খরচ দেড় লাখ

সিরাজুজ্জামান
সিরাজুজ্জামান সিরাজুজ্জামান , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২৮ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে চলতি সংসদে মাত্র দুদিন উপস্থিত ছিলেন। অথচ তার সংসদ কার্যালয়ে আপ্যায়ন বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। অন্যদিকে তার ছোট ভাই সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম কাদেরের খরচ হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮৭ টাকা।

৩০ ডিসেম্বর (২০১৮) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আগের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে সরিয়ে জানুয়ারিতে নিজেকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ঘোষণা দেন এরশাদ। চলতি সংসদের তিন অধিবেশনের ৫২ কার্যদিবসের মধ্যে মাত্র দুদিন সংসদে গেছেন জাতীয় পার্টির সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। এমনকি বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সংসদে বক্তব্য দেয়ারও সুযোগ হয়নি তার। অথচ চার মাসে তার অফিসের খাওয়ার ভাউচার করা হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৬৬ টাকা।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন পরিচালিত সংসদ ভিআইপি ক্যাফেটেরিয়ার ইউনিট ব্যবস্থাপক আকতার আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘তার (এরশাদ) কার্যালয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আপ্যায়ন চলে। মে মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। তবে এসব ব্যয় বৈধ। কারণ, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা হিসেবে অফিস চালানোর জন্য তারা বড় অঙ্কের ভাতা পেয়ে থাকেন।’ তবে এ বিষয়ে তিনি আর কোনো তথ্য দিতে ও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

৮৯ বছর বয়সী সাবেক সেনাশাসক ও পাঁচবারের সাংসদ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় থাকার পর গত ১৪ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান

সংসদের প্রশাসনিক শাখা সূত্র জানায়, এরশাদের সংসদের অফিসে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৪৩ হাজার ৫৬৫ টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়া মার্চে ২৯ হাজার ৬২৬ টাকা, এপ্রিলে ৪৫ হাজার ৮১০ টাকা এবং মে মাসে ৩২ হাজার ৬৫ টাকা আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে। যার মোট অঙ্ক দাঁড়ায় ১ লাখ ৫১ হাজার ৬৬ টাকা।

একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম তিন অধিবেশনের ৫২ কার্যদিবসের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধিবেশনের পুরোটাই সংসদের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন এরশাদ। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃতি পেলেও এ সময়ে কোনো বক্তব্য দেয়ার সুযোগ হয়নি সাবেক এ রাষ্ট্রপতির।

এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ের উপসচিব (আইন-২) এ কে এম জি কিবরিয়া মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, চলতি সংসদে ২০১৯ সালে চলা তিনটি অধিবেশনে মাত্র দুইদিন উপস্থিত ছিলেন এরশাদ। ১০ ফেব্রুয়ারি ও ৬ মার্চ সংসদের উপস্থিত ছিলেন তিনি।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, যতদূর মনে পড়ে একাদশ জাতীয় সংসদে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কোনো বক্তব্য রাখতে পারেননি। বেশির ভাগ সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে আমি জানি।

একাদশ সংসদের বিরোধীদলীয় চিপ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, সংসদের প্রত্যেক ভিআইপি পদাধিকার বলে আপ্যায়ন ভাতা পান। সংসদে যেসব অতিথি আসেন তাদের জন্য সেই আপ্যায়ন ভাতা থেকে ব্যয় করা হয়। এটা দোষের কিছু নয়।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম জাগো নিউজকে বলেন, যার অতিথিদের জন্য এ আপ্যায়ন ভাতা বরাদ্দ তিনিই যদি সংসদে না যান তাহলে তার কাছে অতিথি কিংবা এলাকাবাসীরও যাওয়ার কথা নয়। এ বরাদ্দের বিষয়ে সংসদের আরও সতর্ক হতে হবে।

সূত্র আরও জানায়, এ তিন মাসে এরশাদের ছোট ভাই সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম কাদেরের খরচ হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮৭ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে ৫০ হাজার ১১ টাকা, মার্চে ২৯ হাজার ১৪৫ টাকা, এপ্রিলে ২৪ হাজার টাকা এবং মে মাসে ৪৩ হাজার ২৯৮ টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে তিনি নিয়মিত সংসদে গেছেন এবং বক্তব্যও রেখেছেন।

এইচএস/আরএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।