ট্যানারি বন্ধে বিপাকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা


প্রকাশিত: ১২:০৪ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রামের বড় ট্যানারি প্রতিষ্ঠান। ফলে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাই এবার চট্টগ্রাম থেকে সংগৃহিত চামড়া ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতে হবে তাদের।

কোরবানির সময় ঐতিহ্যগতভাবে চট্টগ্রামে পশু জবাই করা হয় অনেক বেশি। ঢাকার পরেই চট্টগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি চামড়া সংগ্রহ করেন আড়তদাররা।
 
জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে ব্যাবসায়ীরা প্রায় চার থেকে সাড়ে চার লাখ গরু, মহিষ ও ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেন। যার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশই চট্টগ্রামের দুই ট্যানারি প্রতিষ্ঠান মদিনা ট্যানারি ও টিকে গ্রুপের রিফ লেদার লিমিটেড কিনে নেয়।

কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে হালদায় ট্যানারির বিষাক্ত পানি যাচ্ছে এমন অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ওই দুটি ট্যানারি প্রতিষ্ঠান। ফলে ঢাকায় চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে সঠিক সময়ে চামড়া বিক্রি ও কাঙ্খিত দাম পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে আড়তদারদের মনে ।
 
জানা গেছে, গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ পশু কোরবানি দেয়া হয় চট্টগ্রামে। এসব চামড়া বাজারজাত ও সংরক্ষণের জন্য স্বাধীনতার পর চট্টগ্রামে গড়ে ওঠে ২২টি ট্যানারি কারখানা।

ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের ২২টি ট্যানারির ২০টিই বন্ধ হয়ে গেছে । আড়তদারদের সর্বশেষ ভরসাছিল অক্সিজেন এলাকার মদিনা ও কালুরঘাটের রিফ লেদার নামের দুটি ট্যানারি প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু গত মে মাসে পরিবেশ অধিদফতরের এক চিঠিতে কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে ওই দুই প্রতিষ্ঠানও। ফলে এবার কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে নতুন সংকটে পড়েছেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের মোট চামড়ার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশই মদিনা ট্যানারি ও রিফ লেদার ট্যানারি কিনে নিতো। এবছর তাদের চামড়া না কেনার ঘোষণায় আমরা অনেক বড় সংকটে পড়েছি।’

ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা সময় মতো টাকা দিতে চাননা। চট্টগ্রামের অনেক ব্যাবসায়ী তাদের কাছে কয়েক কোটি টাকা পাওনা আছেন। এই অবস্থায় নতুন করে কোরবানির চামড়া বিক্রি করলে টাকা পাওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

এদিকে, এত সংশয়ের পরেও এবারের কোরবানির ঈদে চট্টগ্রাম থেকে পাঁচ লাখ পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। এসব চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

ব্যবসায়ীরা জানান,  এবছর সমিতির সদস্যসহ ১৬০ জন আড়তদার কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবেন। কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবানসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে সাড়ে তিন লাখের মতো গরু, এক লাখ ছাগল এবং ২০ হাজারের মতো মহিষের চামড়া সংগ্রহ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ বছর সরকারের বেধে দেওয়া দরে কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে আগ্রহী নন চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা।

তাদের যুক্তি, বিশ্ববাজারে অব্যাহতভাবে চামড়ার দাম কমছে। তাই সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলে তাদের লোকসান হবে।

মদিনা ট্যানারির মার্কেটিং ম্যনেজার ইফতেফাকুর রহমান সোহেল জানান, এবার বিশ্ব বাজারে চামড়ার দাম কম থাকায় দেশেও এর প্রভাব পড়বে।

কোরবানির সময় বিশ্ব বাজারে কাঁচা চামড়ার দরপতনের কারণে দেশীয় কাঁচা চামড়ার বাজারে ধ্বসের আশঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

মদিনা ট্যানারি মালিক আবু আহমেদ জানান,পরিবেশ অধিদফতরের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবার চামড়া কেনা হবে না। তবে একদম কিনবো না এমনটাও নয়।

এসকেডি/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।