২০২১ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হবে
২০২১ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ঋণ পরিশোধের জন্য অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারব। চালু করতে করতে হয়তো আরও ৩-৪ মাস সময় লাগবে। সর্বশেষ ২০২১ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল করবে। আমরা যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারব ইনশাআল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন, আমরা এই প্রত্যাশাই করছি।’
বুধবার (২৮ আগস্ট) পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। মূল সেতুর সবকটি পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতুর ৪২টি পিলারের (পিয়ার) মধ্যে ৩১টি পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১১টির কাজ চলমান আছে এবং তা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘মাওয়া সাইটে এ পর্যন্ত ট্রাস (স্প্যান) এসেছে ২৭টি, এর মধ্যে ১৪টি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া অবশিষ্ট স্প্যানগুলোর কাজ চীনে প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টের (সেতুর দুই প্রান্তের স্থলভাগের অংশ) পাইলিং এবং পিয়ারের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে পিয়ার ক্যাপের কাজ শেষ পর্যায়ে এবং গার্ডার স্থাপনের কাজ চলছে।’
‘রেলওয়ে স্ল্যাবের জন্য মোট ২ হাজার ৯৫৯টি প্রি-কাস্ট স্ল্যাবের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৫৪টি স্ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি স্ল্যাব তৈরির কাজ আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে শেষ হবে। রোডওয়ে স্ল্যাবের জন্য মোট ২ হাজার ৯১৭টি প্রি-কাস্ট রোডওয়ে ডেকস্ল্যাবের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে এক হাজার ২৬৯টি স্ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি স্ল্যাব তৈরির কাজ চলমান আছে।’
মূল সেতু কাজের চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এবং এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৭৩২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
নদী শাসন কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নদী শাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৬২ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৪৮ শতাংশ। মোট ১৪ কিলোমিটার নদী শাসন কাজের মধ্যে ৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। নদী শাসন কাজের চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ১৮৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।’
পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় আর বাড়বে না
অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি কিছু মিডিয়ায় এসেছে পদ্মা সেতুর ব্যয় এতো বেড়ে যাচ্ছে। আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করছি, আমরা প্রজেক্টের প্রায় শেষ পর্যায়ে, এখন পর্যন্ত যে মূল সেতুর ব্যয় ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা, এটা বাড়ার কোনো ইঙ্গিত আমরা পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘নদী শাসনের বিষয়ে আমরা জোর গলায় বলতে পারি, ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বাইরে যাবে না।’
আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, ‘টাকা যেটা বেড়েছে... যেহেতু জমির দাম তিনগুণ হয়ে গেছে, আর কিছু কিছু ট্যাক্স বৃদ্ধি হয়েছে। যেগুলোকে চার্জ এক্সপেন্ডিচার বলে। সেই কারণে বৃদ্ধি হয়েছে। পদ্মা সেতু যদিও ২০১০ সালের ডিজাইন অ্যান্ড এস্টিমেট, আলহামদুলিল্লাহ আমরা খুবই লাকি এবং আল্লাহ তায়ালা আমাদের রহম করেছেন, ওই রকম নোটেবল কোনো চেঞ্জ (পরিবর্তন) হয়নি। এখন বাড়ার কোনো ইঙ্গিত আমি পাচ্ছি না।’
ঋণ পরিশোধে চুক্তি
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের দেয়া ঋণ পরিশোধের জন্য অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এখলাছুর রহমান এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. মনিরুজ্জামান চুক্তিতে সই করেন।
চুক্তি সইয়ের পর ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করেছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে এই ঋণ অর্থ বিভাগের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর প্রাপ্ত আয় থেকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সরকারকে সুদাসলসহ সমুদয় অর্থ ফেরত প্রদান করবে।’
সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও অর্থ বিভাগের মধ্যে আজ ঋণ পরিশোধ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘ঋণ চুক্তি অনুযায়ী সেতু কর্তৃপক্ষ ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে অর্থ বিভাগ তথা বাংলাদেশ সরকারকে ঋণ পরিশোধ করবে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে ৩৫ বছর। ১ শতাংশ সুদ হারে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করা হবে। ঋণ পরিশোধের সিডিউল অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে প্রায় সর্বনিম্ন ৮২৬ কোটি হতে সর্বোচ্চ এক হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে।’
‘বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু সেতু প্রকল্পে ৩টি দাতা সংস্থার (আইডিএ, এডিবি ও ওইসিএফ) কাছ থেকে গৃহীত ঋণ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সম্পাদিত ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ঋণের আসল ও সুদসহ প্রতি বছর ৪ কিস্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরিশাধ করছে। সেতু কর্তৃপক্ষ প্রতি অর্থবছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা এ বাবদ বাংলাদেশ সরকারকে পরিশোধ করে আসছে। আগামী ২০৩৩-৩৪ অর্থবছরে ওই ঋণ সুদসহ সম্পূর্ণ পরিশোধ হবে।’
চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের (কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প) ব্যয়ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সরকারকে পরিশোধ করবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
অনুষ্ঠানে অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/এমএসএইচ/জেআইএম