সন্তানদের কেনাকাটা করতে যাওয়াই কাল হয়েছে কৃষ্ণা রায়ের
সন্তানদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন কৃষ্ণা রায় (৫০)। আর বাইরে বের হওয়াটাই তার জন্য কাল হলো। বাসে কাটা পড়ে একটি পা হারিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর বাংলামোটরে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় একটি বাস তার পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
রাতে তাকে জাতীয় অর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে নিয়ে গেলে অপারেশন করে তার ডান পা কেটে ফেলা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন।
স্বজনরা জানান, কৃষ্ণা রায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সহকারী ব্যবস্থাপক (হিসাব বিভাগ) পদে কর্মরত। ৩০ বছর থেকে তিনি চাকরি করছেন। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ। বর্তমানে তিনি যাত্রাবাড়ী একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ বসবাস করেন। বাস চাপায় নিজের পা হারিয়ে বর্তমানে অর্থোপেডিক হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ৪৭ নম্বর বেডে শুয়ে আর্তনাদ করছেন।
তারা বলেন, ‘তার পরিবারে এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্বামী রয়েছেন। ছেলে ও মেয়ে দুজনই স্নাতক পর্যায়ে পড়ালেখা করছেন। তার স্বামী গত দুই বছর আগে অবসর যাওয়ায় বর্তমানে তিনি বাসায় থাকেন।
কৃষ্ণা রায়ের আহত হওয়ার খবর শুনে বুধবার (২৮ আগস্ট) অফিসের সহকর্মীরা হাসপাতালে দেখতে আসেন। তার চিকিৎসা বাবদ সব ব্যয় প্রতিষ্ঠান থেকে করা হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে।
কৃষ্ণা রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘অফিস শেষ করে ছেলে-মেয়েদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনতে অর্থ উত্তোলন করতে বাংলামোটর মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে যাচ্ছিলাম। বাংলামোটর ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের একটি বাস ব্রেক ফেল করে ফুটপাতে উঠে যায়। এ সময় তিনি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও তার ডান পায়ের ওপর বাসের চাকা উঠে যায়। সেখানেই আমার পা কেটে যায়। এ সময় অনেক রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে পথচারীরা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমাকে অর্থোপেডিক হাসপাতালে আনা হয়।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘পা হারিয়ে আমার সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। আমার জীবনের সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। আর কখনও আমি অফিসে যেতে পারব না। বাকি জীবন আমি কীভাবে কাটাব, কীভাবে চলাফেরা করব?’ এসব বলতে বলতে পায়ের ব্যথায় আর্তনাদ করতে থাকেন তিনি।
দুর্ঘটনার পর ছেলে কৌশিক চৌধুরী মায়ের পাশে রয়েছেন। কৌশিক বলেন, ‘আম্মু আমাদের নাস্তা খাইয়ে সকালে সুস্থ মানুষ অফিসে যান। বিকেলে অফিস শেষে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে যাওয়ার সময় একটি বাস আম্মুর পায়ের ওপর উঠে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো স্থানে নিরাপদ নই। পথচারীর চলাচলের স্থান ফুটপাত দিয়ে হাঁটলেও আমাদের দুর্ঘটনার স্বীকার হতে হচ্ছে। কেউ যেন দেখার নেই!’ কোথায় গেলে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে- এমন প্রশ্ন তুলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কৌশিক আরও বলেন, ‘পরিবারে বাবা থাকলেও মা সবসময় আমাদের দুই ভাইবোনের খবর নেন। প্রতিদিন অফিস থেকে বের হওয়ার সময় আমরা কী খাব, কিছু লাগবে কি না ফোন করে বারবার জানতে চান। আমাদের কোথায় কী প্রয়োজন তা সব কিছু আমার আম্মু করে থাকেন। বর্তমানে আম্মুর একটি পা কেটে ফেলায় আমাদের পরিবারের সকলে অসহায় হয়ে পড়েছে।’
এমএইচএম/এসআর/এমকেএইচ