একমাত্র ডেঙ্গু আমাকে কাবু করেছে : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৩৬ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০১৯

১৯৬৮ সালে মাস্টার্স পাস করেছেন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘বয়স অনেক হয়েছে। আমাকে কেউ কাবু করতে পারেনি। একমাত্র ডেঙ্গু আমাকে কাবু করেছে।’

রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে নিজের বয়সের তুলনা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আরেফিন সিদ্দিক সাহেব আমার থেকে বড়। কিন্তু আমি ওনার থেকে অনেক বড়। বয়সের দিক থেকে আমি বড়। কারণ উনি ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। আর আমি ১৯৬৮ সালে মাস্টার্স শেষ করেছি। বয়স অনেক হয়েছে। কেউ আমাকে কাবু করতে পারেনি। একমাত্র ডেঙ্গু আমাকে কাবু করেছে। বাজেটের দু’দিন আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হই। ৭ মিনিট আমার জ্ঞান ছিল না। ওই ৭ মিনিটি কীভাবে কেটেছে আমি তা মিলাতে পারি না।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর আগে দুটি যুদ্ধ রেখে গেছেন। একটি হচ্ছে রক্তাক্ত যুদ্ধ, যার মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই যুদ্ধে ৩০ লাখ নারী-পুরুষ শহীদ হয়েছেন, দুই লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। জীবন দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ জাতীয় চার নেতা। আর একটি যুদ্ধ তিনি রেখে গেছেন, সেটি হলো সোনালি যুদ্ধ। যারা প্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি, তারা সেই রক্তের ঋণ শোধ করতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে একসঙ্গে কাজ করবেন।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা সারা জীবন স্বপ্ন দেখেছেন এ দেশের মানুষের অর্থনীতির মুক্তির। এ দেশের মানুষকে তিনি অনেক ভালোবেসে ছিলেন, ভালোবাসতেন। সেজন্য তিনি কোনো কাজ অসমাপ্ত রেখে যাননি। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নাম নয়, তিনি বিশ্বাসের নাম, একটি দেশের নাম, একটি পতাকার নাম।’

পাকিস্তান আমলে ট্রাঙ্কে বসে ট্রাঙ্কে কাগজ রেখে অডিট করতে হতো জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে আমি যখন অডিট করতে যেতাম, তখন চারজন অডিটরের মধ্যে অন্যরা আগেই টেবিলের সব জায়গা দখল করে রাখতেন। আমাকে বসার জন্য একটি পুরনো ট্রাঙ্ক দেয়া হতো, আর অডিটের কাগজপত্র ও লেখার জন্য আরেকটি ট্রাঙ্ক দেয়া হতো, সেখানে বসেই আমাকে অডিট করতে হতো। পাকিস্তানিরা আমাদের বাঙালিদের এভাবেই অবমূল্যায়ন করত। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু আমাদের মুক্তি এনে দিয়েছেন।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, জাতির পিতা যদি স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করতেন তাহলে এক মাস, দুই মাস, না হলে এক বছর, না হয় ১০ বছর পর ধীরে ধঅরে মানুষের মন থেকে হারিয়ে যেতেন। কিন্তু আজকে ওই চক্র হিসেবে ভুল করেছে, তারা অনেক বড় ভুল করেছে। এ বাঙালি জাতি যতদিন এ পৃথিবীতে থাকবে আমি বিশ্বাস করি জাতির পিতা আমাদের মধ্যে ছিলেন, তিনি আছেন, তিনি সারাজীবন থাকবেন যতদিন সূর্য থাকবে এ পৃথিবীতে।’

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রোগ্রামে জাতির পিতার থাকার কথা ছিল। আমি সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। শেখ হাসিনাও তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। আমাদের উপাচার্য শেখ হাসিনাকে ১৫ আগস্টের প্রোগ্রামে থাকার জন্য বলেছিলেন। অন্যদিকে শেখ হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়া প্রশিক্ষণের জন্য জার্মানিতে ছিলেন। তিনি (ওয়াজেদ মিয়া) স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে রাখার জন্য আলাদা বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। ওয়াজেদ মিয়া বার বার শেখ হাসিনাকে ফোন করছিলেন সেখানে যাওয়ার জন্য। কিন্তু উপাচার্য ১৫ আগস্টের প্রোগ্রাম পর্যন্ত থেকে যাওয়ার কথা বলায় তিনি (শেখ হাসিনা) দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে বিষয়টি বলেন। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘জামাই যা বলে তাই কর।’ এরপর ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই শেখ হাসিনা জার্মানির উদ্দেশে রওনা হন।”

এমএএস/এনডিএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।