এক লিটার কচি ডাবের পানির দাম ৪৮০ টাকা!

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১২:১৩ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৯

রাজধানীর ইস্কাটন এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন। সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এক আত্মীয়কে দেখতে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের বাইরে কচি ডাব দেখে রোগীর জন্য তা কিনতে চান শাহাদাত।

কিন্তু দোকানির মুখে ছোট সাইজের একটি কচি ডাবের দাম ১২০ টাকা শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে যান তিনি। দোকানি জানান, একটু বড় সাইজের ডাবের দাম ৮০ টাকা পর্যন্ত রাখা যাবে।

পাশের আরও দুটি দোকান ঘুরে দেখেন একই দাম। পরে নিরুপায় হয়ে বিক্রেতার হাতে এক লিটারের একটি খালি বোতল দিয়ে সেটিতে কচি ডাব কেটে পানি দিতে বলেন শাহাদাত। দাঁড়িয়ে দেখলেন, এক লিটারের বোতলটি ভর্তি হতে চার চারটি কচি ডাব কাটতে হলো। পকেট থেকে ৫০০ টাকার একটি নোট বের করে দিলে দোকানে তাকে বাকি টাকা ফিরিয়ে দেয়।

আজ মঙ্গলবার জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেছে? ছোট সাইজের একটা কচি ডাবের দাম ১২০ টাকা হয় কী করে? এক লিটার ডাবের পানির দাম যদি ৪৮০ টাকা হয় তাহলে গরিব রোগীরা তা কীভাবে কিনবে।

আষাঢ়ে গল্পের মতো শোনালেও বর্তমানে রাজধানীর বাজারে স্মরণকালের সর্বোচ্চ চড়া দামে ডাব বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীসহ সারাদেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায়, ডাবের দামে এর প্রভাব পড়েছে।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার একাধিক ডাব বিক্রেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা সবাই তাদের দামের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কথা স্বীকার করে বলেন, তারা বেশি দামে কিনে আনছেন বলে বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ নিয়ে প্রতিদিনই একাধিক ক্রেতার সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে।

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রধান ফটকে নিয়মিত ডাব বিক্রেতা রমিজ উদ্দিন জানান, ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে এমনিতেই ডাবের সরবরাহ অপেক্ষাকৃত কম থাকে। এছাড়া গত দুই মাস ধরে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ডাবের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গেছে। চিকিৎসকরা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ডাবসহ বিভিন্ন ধরনের পানীয় দেশে বেশি পান করার পরামর্শ দেয়ায়, ডাবের দাম এর প্রভাব পড়েছে।

তিনি জানান, মাস খানেক আগেও যে ডাবের প্রতিটির দাম ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন, সেই ডাব এখন ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ১০ টাকা লাভে ৮০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
রোগীর স্বজনরা সবাই ছোট সাইজের কচি ডাবের খোঁজ করায় চাহিদা বেড়েছে। ওই ডাব কমপক্ষে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল ১৯ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৪ হাজার ৭৯৮ জন। আশাব্যঞ্জক খবর হলো, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে হাসপাতালে মোট ৬ হাজার ৭৩৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৩ হাজার ৪১৯ জন এবং বাইরে ৩ হাজার ৩১৪ জন ভর্তি রয়েছেন।

এমইউ/এমএসইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।