স্কুলজীবনের প্রিয় শিক্ষকের খোঁজে তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৯:৫২ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০১৯

চট্টগ্রামের সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন হাছান মাহমুদ। সময়ের পরিক্রমায় তিনি আজ তথ্যমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। রাষ্ট্রীয় নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে দিন-রাত ব্যস্ত থাকলেও ভুলতে পারেননি মুসলিম হাই স্কুলের স্মৃতি।

ভালোবাসার টানে শুক্রবার (৯ আগস্ট) সকালে শৈশবের স্মৃতি জড়ানো বিদ্যাপীঠ মুসলিম হাই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাককে তার বায়েজিদের বাসায় দেখতে যান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে তথ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।

১৯৬৫ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত মুসলিম হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন মোহাম্মদ ইসহাক। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। বহুদিন পর কাছে পেয়ে ড. হাছান মাহমুদের কাছে মোহাম্মদ ইসহাক জানতে চান, তোমার সন্তান কয়জন? মন্ত্রী জবাব দেন, ‘আমার এক ছেলে, দুই মেয়ে। ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে, মেয়ে এ-লেভেলে পড়ছে।’ বলতেই শিক্ষক বলে ওঠেন, ‘দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ভালো। চট্টগ্রামে সবচেয়ে ভালো স্কুল হচ্ছে তিনটি- মুসলিম হাই, কলেজিয়েট ও খাস্তগীর।’

নবম শ্রেণির শেষের দিকে হাছান মাহমুদ বয় স্কাউট টিমের ক্যাপ্টেন হন। একই সঙ্গে রেডক্রস টিমেরও সদস্য তখন। এসবে মেতে থাকার ফলে প্রিয় ছাত্র লেখাপড়ায় কিছুটা অমনোযোগী হয়ে পড়েছিলেন বলে মনে হয়েছিল ইসহাক স্যারের। তাই তিনি একদিন সাইকেল চালিয়ে হাছান মাহমুদের বাবার কাছে গিয়ে অভিযোগ দেন। বলেন, আপনার ছেলে তো এখন পড়ে না, নেতাগিরি করে। হাছান মাহমুদের বাবা রাগী মানুষ ছিলেন। শুনেই ছেলেকে দিলেন মাইর। সেই স্মৃতি হাতড়ে কিছুক্ষণ হাসাহাসি করেন ছাত্র-শিক্ষক।

প্রিয় শিক্ষকের কাছে তথ্যমন্ত্রী জানতে চান, এখন মুসলিম হাই স্কুলে পড়াশোনার মান কেমন? জবাব আসে, ‘খুবই ভালো। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়- এর মধ্যে থাকেই।’ পাশ থেকে আরেকজন যোগ করেন, ‘শতভাগ পাসের হার, এবার ৩১২ জন জিপিএ- ৫ পেয়েছে।’

প্রসঙ্গক্রমে প্রবীণ শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘উদারতার কোনো বিকল্প নেই। আকাশসম উদারতা দেখাতে হবে।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজামকে নিজের প্রিয় সাংবাদিক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

hasan-02

আলাপচারিতায় শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করেছি, আবার বৈরুতে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে এমএ করেছি, এরপর শিক্ষকতায় এসেছি।’ এ সময় তথ্যমন্ত্রী বলে ওঠেন, ‘স্যারের যোগ্যতা এত বেশি যে, শিক্ষকতায় না আসলে পাকিস্তানের সচিব হতেন।’

মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘আমি তো সেখানে (প্রশাসনের কর্মকর্তা) যাব না বলে আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম।’ স্মৃতিচারণ করে তথ্যমন্ত্রী জানতে চান, স্যার আগে সাইকেল চালাতেন, এখনও চালান? জবাব আসে, ‘অনেকদিন ধরে চালাই না।’

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে আগামীতে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান বলে প্রত্যাশার কথা জানান প্রবীণ শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাক। তিনি বলেন, একজন ডক্টর আরেকজন ডক্টরের মূল্য বুঝবেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি একজন লিডার, তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর দায়িত্বে ভালো করতেন বলেও বিশ্বাস করেন এ শিক্ষক।

একটু দ্বিমত পোষণ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ডা. দীপু মনি শিক্ষায় খুব ভালো করছেন।’

ফিরে যাওয়ার আগে আরেকবার প্রিয় শিক্ষকের পা ধরে সালাম করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাকও মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেন প্রিয় ছাত্রকে।

তথ্যমন্ত্রীর একই ব্যাচের স্কুলবন্ধু জামাল নাছের ও সামশুদ্দিন দুলাল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আবু আজাদ/এমএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

আরও পড়ুন