ফাঁকা হচ্ছে বন্দরনগরী, ভোগান্তিতে ঘরমুখো মানুষ

আবু আজাদ
আবু আজাদ আবু আজাদ , নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৫:২৮ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০১৯

ঈদুল আজহার বাকি তিনদিন। তবে আজ (বৃহস্পতিবার) সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় আগেভাগেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে নগরবাসী। অফিস ছুটি শেষে বিকেলে সেই ফেরা রূপ নিয়েছে জনস্রোতে। বাস-লঞ্চে ট্রেনে আসন না চেয়ে অনেকেই যাত্রা করছেন ঝুঁকি নিয়ে।

বরাবরের মতো এবারও ঠিক একই প্রশ্ন। কতটুকু নিরাপদে বা স্বাচ্ছন্দ্যে চট্টগ্রাম ছাড়ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ট্রেনের টিকিট শেষ! বাসের টিকিট মিললেও দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই অংশের ভাঙাচোরা রাস্তা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে। সাম্প্রতিক বন্যায় এ মহাসড়কটি যাত্রীদের জন্য হয়ে উঠেছে নরক যন্ত্রণার।

এছাড়া নৌপথেও যাত্রী পরিবহনে অতিরিক্ত লঞ্চের ব্যবস্থা নেই। সব মিলিয়ে এবার ঈদে চট্টগ্রামে বসবাসকারীদের বাড়ি ফিরতে ভোগান্তির শেষ নেই। এ বিষয়ে যাত্রীদের শত অভিযোগ থাকলেও সমাধানের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে মানুষের নানা ভোগান্তির চিত্র চোখে পড়ে। হুড়োহুড়ি করে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে উঠছে যাত্রীরা। ট্রেনের ছাদে এবং দরজায় ঝুলে বাড়ি ফিরছেন অনেকে। কোনো ট্রেনেই তিল ধারণের ঠাঁই নেই। অগ্রিম টিকিট না পেয়ে অনেকেই স্টেশনে হতাশা প্রকাশ করছেন।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) থেকে ট্রেনে বাড়ি ফেরা মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা। তারা জানান, ট্রেনে যাত্রীদের চাপ আরও বাড়ছে।

Ctg-eid-journey

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, সকাল থেকে তিনটি ট্রেন শিডিউল মেনে ছেড়ে গেছে। বাকি ট্রেনগুলোও শিডিউল মেনে ছেড়ে যাবে। সকাল ৭টায় সুবর্ণ এক্সপ্রেস, ৮টা ১৫ মিনিটে চট্টলা এক্সপ্রেস ও দুপুর সাড়ে ১২টায় মহানগর এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এছাড়া মহানগর গোধূলি, সোনার বাংলা ও রাত ১১টায় তূর্ণা এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।

বাস যাত্রীদের অবস্থা আরও কঠিন। বুধবার (৭ আগস্ট) শেষ হয়েছে বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি। বাসে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত যাত্রী। দূরপাল্লার লোকাল বাসগুলোতেও ভেতরে অতিরিক্ত এবং ছাদে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। মহাসড়কে খানাখন্দের ভোগান্তি সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যানজট।

নগরের বিআরটিসি বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই বাসের টিকিট কিনলেও সময় মতো বাসের দেখা পাচ্ছেন না। যাত্রীদের অভিযোগ, তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি ভাড়া নেয়া হয়েছে।

Ctg-eid-journey

নগরের একটি মাল্টিপারপাস কোম্পানিতে কাজ করা লতিফুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহীর বাস ভাড়া ৯শ’ টাকা হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা। অতিরিক্ত এমন ভাড়া দাবি করা হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রায় সব বাস সার্ভিসেই। বাস স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের ভিড়কে কেন্দ্র করে বাস মালিকরা পকেট কাটছেন।

নৌপথেও যাত্রীদের এবার বিড়ম্বনার শেষ নেই। চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ, হাতিয়া ও বরিশালের নৌপথের যাত্রীরা এবার হতাশ। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এ পথে চারটি জাহাজ পরিচালনা করলেও ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত কোনো লঞ্চ বা জাহাজের ব্যবস্থা করেনি। ফলে যাত্রীরা বেসরকারি লঞ্চ বা জাহাজে করেই বাড়ি ফিরছেন। চাহিদা বেশি থাকায় ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।একই সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।

এদিকে ঈদে ফাঁকা নগরীতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম পুলিশ। ঈদে গ্রামে ছুটে যাওয়া মানুষের বাসাবাড়ির নিরাপত্তা দিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নগর পুলিশ। মোবাইল টিম, টহল টিমসহ বন্দরনগরী পাহারা দিতে পাঁচ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন নগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।

আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।