ডেঙ্গু : একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন নুসরাত

মুরাদ হুসাইন
মুরাদ হুসাইন মুরাদ হুসাইন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০৮ পিএম, ০৫ আগস্ট ২০১৯

রাজধানীর শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা সেলে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। ডেঙ্গু শনাক্তে হাসপাতালের আউটডোরে বিনামূল্যে ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন টেস্ট করানো হচ্ছে।

সোমবার (৫ আগস্ট) সকালে শিশু হাসপাতালের আউটডোরে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য অভিভাবক-শিশুদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় ২০০ শিশুকে এ পরীক্ষা করানো হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা জরুরি শুধু তাদের ভর্তি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

nusrat

শ্যামলী থেকে সাত বছরের ছেলে বাপ্পীকে নিয়ে এসেছেন মা নুসরাত বেগম। বাপ্পী মোহাম্মদপুরের একটি স্থানীয় বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

nusrat

বাপ্পীর মা নুসরাত বেগম জাগো নিউজকে জানান, দুদিন আগে স্কুল থেকে ফেরার পর ছেলের শরীর খারাপ লাগছে বলে জানায়। এর কিছুক্ষণ পর জ্বর আসে। গত দুদিন ধরে জ্বর থাকায় আজ সকালে শিশু হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে এনেছি।

তিনি বলেন, বাড়ির পাশের ফ্ল্যাটের ৯ বছরের একটি শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি। এক আত্মীয়ের ১১ বছরের ছেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এসব শুনে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সব সময় ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।’

nusrat

তিনি আরও বলেন, ‘দুদিন ধরে আমার সন্তানের জ্বর কমছে না, এ জন্য আজ ভোরে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ছেলেকে নিয়ে এসেছি। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। আমার মতো অনেক অভিভাবক ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে।’

nusrat

জানা গেছে, ঢাকা শিশু হাসপাতালের আউটডোরে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষার জন্য সেল করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা সেখানে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। রোববার (৪ আগস্ট) প্রায় ২০০ জনের ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনের রিপোর্ট পজিটিভ ধরা পড়েছে। এর বাইরে ইনডোর ও কেবিনে আলাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানেও এ রোগ শনাক্ত করা হচ্ছে। আউটডোরসহ ডেঙ্গু রোগীদের জন্য চারটি সেল করা হয়েছে। এছাড়া একটি ওয়ানস্টপ সেল রয়েছে।

এ হাসপাতালে মোট ১৪৫ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। গত তিন মাসে এ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জুনে একজন ও জুলাইয়ে দুজন। হাসপাতালের আইসিইউতে ১১ শিশু ভর্তি।

অন্যদিকে গত তিনদিনে এ হাসপাতালে প্রায় ১০০ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গতকাল রোববার ভর্তি হয় ৩৯ জন, ২ আগস্ট ১৯ জন ও ১ আগস্ট ২২ জন ভর্তি হয়েছে।

nusrat

শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সাইদ সাফি আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীদের জায়গা দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে নতুন রোগী ভর্তি করানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে ১২, পিআইসিইউতে ১৬, এনআইসিইউতে ১৬, সিসিএনডিতে ১০ সিসিইউতে ৮ ও এইচডিএনতে ১৮ বেড রয়েছে। এসব বেডে ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুরা চিকিৎসাধীন। নতুন করে কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে এবং অবস্থা গুরুতর হলেও সিট খালি না হওয়া পর্যন্ত কাউকে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এমএইচএম/এএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।