কুরবানির ঐতিহাসিক পটভূমি
ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করাই হচ্ছে কুরবানি। যা হজরত আদম আলাইহিস সালাম-এর সময়কাল হতে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত চালু রয়েছে। এ কুরবানির রয়েছে ঐতিহাসিক ও সমকালীন পটভূমি। আর ক`দিন পরেই হবে কুরবানির ঈদ। সব মুসলিম আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাগো নিউজে কুরবানির সংক্ষিপ্ত পটভূমি তুলে ধরা হলো-
কুরবানির ঐতিহাসিক পটভূমি
পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম কুরবানি হাবিল ও কাবিলের মধ্যে সংঘঠিত হয়েছিল। যা কুরআনে এভাবে এসেছে- وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِن أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الآخَرِ অর্থাৎ `আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনান। যখন তারা ভয়েই কিছু উৎসর্গ নিবেদন করেছিল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনের গৃহীত হয়নি। (সূরা মায়িদা : আয়াত ২৭)
কুরবানির বিধান হজরত আদম আলাইহিস সালাম-এর ছেলেদের পর যুগে যুগে সব শরিআতেই বিদ্যমান ছিল। আল্লাহ বলেন- وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ - অর্থাৎ আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সূরা হাজ : আয়াত ৩৪)
বর্তমান প্রেক্ষাপট-
বর্তমান বিশ্বে মুসলিম সম্প্রদায় যে কুরবানি করেন, তা মূলত হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-এর অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিবিজড়িত ইবাদত। এ ঘটনার ইঙ্গিতে আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেন-
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِن شَاء اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ
অতঃপর সে যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইবরাহিম তাকে বলল, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে- তোমাকে যবেহ করছি, এখন তোমার অভিমত কি বল? সে বলল, হে পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।
فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ - যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল।
وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ - তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহীম!
قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ -তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاء الْمُبِينُ –নিশ্চয় এ ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা।
وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ -আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু।
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ -আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে,
سَلَامٌ عَلَى إِبْرَاهِيمَ -ইব্রাহীমের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।
كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ -এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা সাফফাত : আয়াত ১০২-১১০)
বস্তুত হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-এর পুত্রকে কুরবানি দেয়ার এ ঘটনাকে অবস্মিরণীয় করে রাখতে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য কুরবানিকে ওয়াজিব হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ অর্থাৎ অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানি করুন। (সূরা কাউসার : আয়াত ২)
পরিশেষে...
আল্লাহর কুরআন থেকে কুরবানির ঐতিহাসিক ও সমকালীন পটভূমির শিক্ষা আমাদের জীবনে বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। মনের পশুত্ব কুরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমাদের সব কুরবানিকে আল্লাহ কবুল করুন। আমিন।
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/পিআর