সোহরাওয়ার্দীতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা

জসীম উদ্দীন
জসীম উদ্দীন জসীম উদ্দীন , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১২ পিএম, ০২ আগস্ট ২০১৯

ডেঙ্গুর প্রকোপের চেয়ে যেন আতঙ্কই বেশি। নরমাল জ্বরেও সবাই ছুটছেন হাসপাতালে। ফলে রাজধানীর সব হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে। ব্যতিক্রম নয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও। হাসপাতালের আউটডোরে অর্ধ-শতাংশ রোগীই আসছেন জ্বর নিয়ে।

বৃহস্পতিবার রাতে জ্বর আসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সঞ্জিবের। শুক্রবার সকালে না কমায় ছুটে আসেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে। কর্তব্যরত চিকিৎসক কিছু ওষুধপত্র ও প্রচুর পরিমাণে পানি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, এমন খাবার বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে, তাকে ছেড়ে দেন।

সঞ্জিব শুক্রবার দুপুরে জাগো নিউজকে বলেন, চারদিকে মৃত্যুর খবর, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। পরিবারও আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায়। এমন অবস্থার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে জ্বর আসলো। শুক্রবার সকালেও না কমায় ছুটে আসলাম হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসক আমার চোখ, মুখ, খাওয়ার রুচি, মাথা, হাত-পা ব্যথা করছে কি না- এসব শুনে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে পরামর্শ দিলেন। রক্তটা পরীক্ষা করাতেও বললেন।

‍shuhrawardi-1

আরও পড়ুন>> ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ!

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সরেজমিন হাসপাতালটির আউটডোর ও জরুরি বিভাগে ঘুরে দেখা গেছে, রোগীদের প্রচণ্ড ভিড়। চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। জুনিয়র ডাক্তার ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ব্যস্ত রোগীদের নিয়ে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের আউটডোরে গত মাস থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত এক মাসে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ৮৭৩ জন রোগী। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৩৮ জনই আসেন জ্বর নিয়ে, যা মোট রোগীর ৪৬ শতাংশ।

আরও পড়ুন>> আপনাদের ঠেলাঠেলিতে তো কিছুই হচ্ছে না : সচিবকে হাইকোর্ট

হাসপাতালের ভেতরে দেখা যায়, সবগুলো ওয়ার্ডই রোগীতে ভর্তি। জায়গা না হওয়ায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের ভেতরে ও বাইরের বারান্দায় বেড পেতে অতিরিক্ত রোগীদের সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কিংবা জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে জায়গা পেয়েছেন অনেকে।

‍shuhrawardi-1

রোকেয়া বেগম নামে একজন রোগীর স্বজন জাগো নিউজকে বলেন, পরশু দিন রাতে প্রচণ্ড জ্বর আসে সবজি বিক্রেতা স্বামী উজ্জ্বলের। পরদিনও জ্বর কমছিল না। বাধ্য হয়ে হাসপাতালে আসা। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে জায়গা হয় জরুরি বিভাগের বারান্দায়। গতকাল রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আজ হাতে পাবার পর জানাতে পারলেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত তার স্বামী।

আউটডোরের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ফিরোজা বেগম বলেন, এখানে প্রচুর রোগী আসছে। অধিকাংশই জ্বর নিয়ে। যাদের অবস্থা ক্রিটিক্যাল মনে হচ্ছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, সঙ্গে চিকিৎসপত্র। বাকিদের পরামর্শ দিয়ে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করাতে বলা হচ্ছে।

আরও পড়ুন>> বিশেষ বিমানে আসছে মশার ওষুধের নমুনা

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার ডেঙ্গু জ্বরের টেস্ট ফ্রি ঘোষণার পর নরমাল জ্বর নিয়েও হাসপাতালে আসছে মানুষ। আমাদের প্যাথলজি বিভাগে প্রচুর চাপ তৈরি হয়েছে। নরমাল তো দূরে, জরুরি ভিত্তিতে যেসব রোগীর প্যাথলজির রিপোর্ট দরকার, সেসব পেতেই বেগ পেতে হচ্ছে। অতিরিক্ত চাপে কখনও কখনও আউট অব অর্ডার হয়ে যাচ্ছে মেশিন।

‍shuhrawardi-1

তিনি বলেন, দিন যাচ্ছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১ জুলাই আমাদের এখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৮ জন। আজ ২ আগস্ট। এখন ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা ৩৪৮ জন।

গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার রেশিও উল্লেখ করে উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, গত ২৬ জুলাই মোট চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী ছিল ২০৭ জন, ২৭ জুলাই ২১৭ জন, ২৮ জুলাই ২৩৮ জন, ২৯ জুলাই ২৬৬ জন, ৩০ জুলাই ২৮১ জন, ৩১ জুলাই ৩২২ জন এবং সর্বশেষ গতকাল তথা ১ আগস্ট ছিল ৩৪৮ জন। আজ সন্ধ্যার মধ্যে তা সাড়ে তিনশ’ ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে গত ৩১ জুলাই একজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত পুরুষ রোগী মারা যান এ হাসপাতালে।

জেইউ/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।