সারের দাম কমানোসহ কৃষকদের প্রণোদনা বাড়াবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:২২ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৯

 

কৃষকদের লাভবান করতে প্রয়োজনে সারের দাম আরও কমানোসহ কৃষি যন্ত্রে প্রণোদনা বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, চাল রফতানি করে বিশ্ববাজারে অবস্থান তৈরি করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাজারে টিকে থাকার মানসম্মত চাল বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। যদিও এই মুহূর্তে বিশ্ব বাজারে চালের মূল্য কম, তারপরও আমাদের রফতানিতে যেতে হবে। চাল রফতানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হবে। প্রয়োজনে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি চাল কিনে কম মূল্যে দরিদ্র মানুষদের দেয়া হবে। কীভাবে কৃষকদের কাছ হতে ধান সংগ্রহ করা যায়, সে ব্যাপারে সবার পরামর্শ চান তিনি।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত কৃষক পর্যায়ে ধান-চালের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণে সরকার গৃহীত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে, কৃষকদের কাছে থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ বা প্রক্রিয়াকরণ, মিলারদের মাধ্যমে ক্রাশিং ও সংরক্ষণ এবং চাল রফতানি বিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের কৃষি মূল অর্থনীতিতে ভালো অবদান রাখছে। আগামী মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সরকার ধান সংগ্রহ করা হবে। কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হলে টাকা সরাসরি কৃষকের হাতে যাবে। কৃষকরা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ফসল ফলাবে, তারা ন্যায্য মূল্য পাবে না এটা হতে পারে না। আগামী মৌসুমে যাতে ধানের মূল্যের ক্ষেত্রে বিরূপ ঘটনার উদ্ভব না হয়, সে ব্যাপারে সরকার প্রস্তুত রয়েছে। কৃষিকে লাভজনক করতে হলে এর উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য শুধু ধান কাটার যন্ত্রই নয়, ধান বপণ করা এবং মাড়াই করা যন্ত্রও কৃষদের দেয়া হবে।

তিনি বলেন, ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হবে; প্রান্তিক চাষী, মাঝারি চাষী ও বড় চাষী। এছাড়া প্রত্যেক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছে আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র থাকবে, তারা কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে ধানের আর্দ্রতা পরিমাপ করবেন। সরকার ধান সংগ্রহ করবে। এরপর মিল মালিকদের মাধ্যমে ক্রাশ করে চাল করবে। মিল মালিকদের লাভও দেবে সরকার। এ প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মিলাররা জানান যে, তারা সমস্ত দায়িত্ব নিতে চান। এছাড়া তারা কিছু প্রস্তাবনা দেন যেমন, রফতানি বাজার উন্মুক্ত করা এবং চাল রফতানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষকদের বিনা সুদে বা স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হলে এনজিওর ঋণ পরিশোধের জন্য তাড়াহুড়ো করে ধান বিক্রি করতে হবে না। ধান সংগ্রহ বৃদ্ধি করে ২০ লাখ মেট্রিক টন করা। তারা আরও জানান, বিশ্ব বাজারে মোটা চালের চাহিদা রয়েছে। বিগত ১০ বছরে ফসলের উৎপাদন বছরে ৬ লাখ মেট্রিক টন করে বেড়েছে বলে সভায় জানানো হয়।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ২০১৭ সালে হাওরাঞ্চলের অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফসলের যে ক্ষতি হয়, সে সময় ৪০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়, সে চাল এখনও রয়ে গেছে যার প্রভাব পড়েছে এবারের বোরো মৌসুমে। এছাড়া তিনি আউশ আবাদে প্রণোদনা বাদ দেয়ার কথা বলেন। কৃষকদের বাচাঁতে স্থায়ী সমাধানের পথে যাচ্ছেন। সারা দেশে ১৬২টি খাদ্য গুদাম তৈরি করা হবে, যার মোট ধারণ ক্ষমতা ৭-৮ লাখ মেট্রিক টন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মফিজুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, কৃষি, খাদ্য, বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং চাল কল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ব্যবসায়ীসহ এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি।

উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ৪১ হাজার মেট্রিক টন চাল রফতানির অনুমোদন দিয়েছে। গত মৌসুমে আমাদের খাদ্য শস্য উৎপন্ন হয়েছিল ৪ কোটি ১৩ লাখ মেট্রিক টন, এর মধ্যে শুধু ধান উৎপন্ন হয়েছিল ৩ কোটি ৭৮ লাখ মেট্রিক টন।

এমইউএইচ/এমএসএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।