ডেঙ্গু চিকিৎসা : বিনামূল্যের আশ্বাস থাকলেও নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২৭ পিএম, ২৯ জুলাই ২০১৯
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা করে নিঃস্ব হয়ে গেছে অনেক পরিবার। বিনামূল্যে চিকিৎসা পেতে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হলেও স্যালাইন থেকে শুরু করে সকল পরীক্ষা ও ওষুধ কিনে সর্বশান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেঝেতে থাকা রোগীরা।
আজ সোমবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বেডে জায়গা না পেয়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের আশ্রয় হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে। নির্ধারিত বেডে রোগী ভর্তি থাকায় সকলকে নিচতলার মেঝেতে আশ্রয় নিতে হচ্ছে।
গত সাত দিন ধরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আতাউর রহমান (৪৭)। সঙ্গে তার স্ত্রী ইয়াসমিন সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ইয়াসমিন বলেন, ‘১০ দিন আগে আমার স্বামীর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। সাত দিন আগে তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করি। সিট না থাকায় হাসপাতালের মেঝেতে নিচতলায় আশ্রয় নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সকলে বলে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা করা হচ্ছে। এটি শুনে আসলেও স্যালাইন থেকে শুরু করে সকল ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে, এমনকি সকল পরীক্ষা- নিরীক্ষাও বাইরে থেকে করতে হচ্ছে।’ স্বামীর চিকিৎসায় তাদের সকল জমানো অর্থ ব্যয় হওযায় তারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তার পাশেই শুয়ে আছেন ভাষানটেকের রনি (১৭)। গত পাঁচ দিন আগে তার মা শিউলি বেগম তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এনে ভর্তি করান। ওয়ার্ডে বেড খালি না থাকায় তারও আশ্রয় হাসপাতালের মেঝেতে হয়েছে।
শিউলি বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার টাকার ওষুধ ও ডাক্তারের দেয়া বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হচ্ছে। নিজের জমানো টাকা শেষ হওয়ায় এখন ধার করে এনে ছেলের চিকিৎসা করছি। ফ্রিতে শুধু হাসপাতালের মেঝেতে জায়গা হয়েছে। আর মাঝে মাঝে ডাক্তার ও মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা এসে দেখে যান। এর বাইরে আর কিছু ফ্রি কিছু পাওয়া যাচ্ছে না।’
তার মতো এমন শতাধিক রোগী এ হাসপাতালের মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া ছয়টি ওয়ার্ডও রোগীতে ভরে গেছে। ওয়ার্ডের সিটে স্থান না পেয়ে অনেকে অপরিচ্ছন্ন ওয়ার্ডগুলোর মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছেন।
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত এসব রোগীদের মশারি ছাড়া রাখার কারণে অন্যদেরও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে সংকট থাকায় সকলকে মশারি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান দায়িত্বরত চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত সাত দিনে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন বয়সের এক হাজার ২৪৫ জন হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই হাসপাতালের বেডে রোগীদের জায়গা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসকরাও তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. উত্তম কুমার বড়ূয়া শনিবার (২৭ জুলাই) জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইতোমধ্যে সকল বেড রোগীতে পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় নতুনদের আর ওয়ার্ডে সিট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘রোগীর অতিরিক্ত চাপ থাকায় সকল রোগীদের বিনামূল্যে স্যালাইন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। কাউকে কাউকে বাইরে থেকে স্যালাইন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা সোমবার (আজ) থেকে ডেঙ্গুর প্রধান তিনটি পরীক্ষা ফ্রিতে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছি। এ ছাড়াও হাসপাতালের অর্থ দিয়ে স্যালাইন ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সকলকে বিনামূল্যে স্যালাইন সরবরাহ করা হবে ‘
‘ডেঙ্গু রোগীদের বিনামূল্যে মশারি দেয়া হচ্ছে। তবে অনেকের মশারির নিচে থাকতে অনীহা থাকায় তা ব্যবহার করছে না। তবে কেউ যদি মশারি না পেয়ে থাকেন তাহলে তাদের মশারি দেয়া হবে-যোগ করেন হাসপাতালের পরিচালক।
এমএইচএম/এসআর/এমএস