অন্তত ৩ দিন ৩ বেলা খেতে পারবে যমুনা চরের ২ হাজার পরিবার
আবু সালেহ সায়াদাত আবু সালেহ সায়াদাত , নিজস্ব প্রতিবেদক সিরাজগঞ্জ থেকে
প্রকাশিত: ০৩:০৮ পিএম, ২৯ জুলাই ২০১৯
বন্যার পানিতে ভাসছে সিরাজগঞ্জের চর এলাকা। চারদিকে পানি আর পানি। যমুনার মূল নদীতে পানি বেড়ে চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। চরের পুরো এলাকার বানে ভেসে গেছে সব। কিছুদিন আগেও ঘরের মধ্যেও ছিল পানি। যাদের কেউ নেই তারা এই জলাবদ্ধ ঘরেই কাটিয়েছেন। যাদের সিরাজগঞ্জ শহর অথবা অন্য কোথাও আত্মীয়-স্বজন আছে তারা গিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সিরাজগঞ্জ সদরের পাশেই চর এলাকার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন। সেখানকার বন্যিচর, খয়াপাড়া, ষোলসন, বেড়াকনা, ছোট কয়ড়া, দোগাছি, বয়ড়া, বড় কয়ড়া- এসবই চর এলাকা। এসব এলাকা এখন ভাসছে পানিতে। পানিবন্দি মানুষের কাছে নেই পর্যাপ্ত খাবার। শুকনো খড়ির অভাবে তাদের এক বেলা রান্না হয় তো অন্য বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। অসহায়ত্ব নিয়ে জীবন পার করছে এসব বানভাসি মানুষ। যদিও এখন যমুনার পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
বন্যাকবলিত এলাকা হওয়ায় এতদিন তারা অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন উঁচু স্থানে, কেউবা খোলা আকাশের নিচে। ছিল খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির অপ্রতুলতা। বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় এসব মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা রোগব্যাধি। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এ অবস্থায় প্রতিবারের মতো এবারও বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কম। এই উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতা করছে দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সিরাজগঞ্জ সদরের পাশেই চর এলাকা কাওয়াকোলা ইউনিয়নে নৌকাযোগে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পৌঁছায় জাগো নিউজ টিম। আগে থেকেই হাজার হাজার বানভাসি মানুষ অপেক্ষা করছিল সেখানে। অপেক্ষমাণ বানভাসি দুই হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেয়া হয়।
ত্রাণসামগ্রী হাতে পেয়ে কাউয়াখোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা বৃদ্ধ সাইদুল হক বলেন, ‘বানের পানিতে আমরা ডুবেছিলাম, ঘরের ভেতরেও ছিল পানি। ছিল না শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি। শুকনো খাবার, চালের জন্য আমরা সবাই চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকতাম। আজ জাগো নিউজ আর প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ আমাদের মতো অসহায় দুই হাজার পরিবারের হাতে ত্রাণ তুলে দিল। এতে আমাদের খুবই উপকার হয়েছে। তারা যে ত্রাণ দিয়েছে তাতে অন্তত তিনদিন তিন বেলা খেতে পারব আমরা।’
ত্রাণ নিতে আসা বৃদ্ধা রফেজা বেগম বলেন, চারদিকে পানি, আমরা সবাই পানিবন্দি। দূরের চর হওয়ার কারণে আমরা অনেকেই ত্রাণ পাই না। আজ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ আমাদের ত্রাণ দিয়েছে; আমরা অনেক কিছু পেয়েছি। তাদের জন্য অনেক দোয়া থাকবে আমাদের।
ত্রাণ বিতরণকালে জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার বলেন, বন্যায় দেশের উত্তরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বন্যার্তদের জন্য এবার প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগিতায় প্রায় ২৫ লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে- চাল, ডাল, মুড়ি, পানি, বিস্কুট, স্যালাইনসহ নানা খাদ্যসামগ্রী।
এ সময় সিরাজগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. একরামুল হক, কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জামাত আলী মুন্সী, ইউপি সদস্য সানোয়ার হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, ইউনিয়ন স্বেচ্ছা সেবকলীগের আহ্বায়ক জিয়াউর রহমান জিয়া, সাংবাদিক শঙ্খনীল দেব সুজন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত শুক্রবার লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় ত্রাণসমগ্রী বিতরণের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে জাগো নিউজ টিম। নীলফামারী ও লালমনিরহাটে ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমের পর শনিবার কুড়িগ্রাম জেলায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার গাইবান্ধা জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সেই সঙ্গে আজ সিরাজগঞ্জ জেলার চর এলাকার বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলো।
জাগো নিউজের এবারের ত্রাণসহায়তা কার্যক্রম দলে রয়েছেন জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিয়াউল হক, জাগো নিউজের সহকারী বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ, ওয়েব ইনচার্জ হাসিবুল হাসান আশিক, নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ফয়সাল খান ও নিজস্ব আলোকচিত্রী মাহবুব আলম।
প্রসঙ্গত, চলমান বন্যায় এ পর্যন্ত দেশের ১৭ জেলায় ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ৫১৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৯৪৯টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি তথ্যে বন্যায় সারাদেশে এক লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির ফসল এবং পাঁচ হাজার ২১৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। পরে মধ্যাঞ্চলেও বন্যার বিস্তৃতি ঘটে। উন্নতির দিকে যাওয়ার পর অতিবৃষ্টির কারণে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, ধরলা এবং তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করছে, অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে পানি কমছে।
এএস/বিএ/পিআর