এবার কুড়িগ্রামের বানভাসিদের পাশে জাগো নিউজ ও প্রাণ-আরএফএল
আবু সালেহ সায়াদাত আবু সালেহ সায়াদাত , নিজস্ব প্রতিবেদক কুড়িগ্রাম থেকে
প্রকাশিত: ০২:০৫ পিএম, ২৭ জুলাই ২০১৯
উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে বেশ দূরে উলিপুর উপজেলাধীন হাতিয়া ইউনিয়ন। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনের মাঠে সকাল থেকেই পানিবন্দি মানুষের উপস্থিতি।
বন্যাকবলিত এলাকা হওয়ায় এতদিন তারা অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন উঁচু স্থানে কিংবা খোলা আকাশের নিচে। ছিল খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির অপ্রতুলতা সেই সঙ্গে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় এসব মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের রোগব্যাধি। পাশাপাশি এসব এলাকায় প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
অসহায়ত্বতা নিয়ে জীবন পার করা এসব বানভাসি মানুষ হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে অপেক্ষায় ছিলেন ত্রাণের জন্য। অসহায় এ মানুষের মাঝে ত্রাণ নিয়ে শনিবার সকালে হাজির হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজ২৪.কম। এ উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতা করছে দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
গতকাল উত্তরবঙ্গের নীলফামারী ও সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানায় ত্রাণ বিতরণ শেষে আজ শনিবার কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা হাতিয়া ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকাসহ অনন্তপুর বাজার, চড় গুজিমারি, নীলকণ্ঠ, কলাতিপাড়া এলাকার মানুষের মাঝে এসব ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
ত্রাণ নিতে আসা বৃদ্ধ আক্কাস আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমরা পুরো পানিবন্দি ছিলাম। কোনো ধরনের খাবার ছিল না, রান্না করার চুলা পানির নিচে ছিল। ফলে বাজার থেকে চুলা কিনে এনে চৌকির উপরে রান্না করতে হয়েছে। একবেলা রান্না করে তিন বেলা খেয়েছি। অনেক সময় না খেয়ে থেকেছি। এমন অবস্থায় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে জাগো নিউজ এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এ ত্রাণে আমাদের খুবই উপকার হয়েছে।’
ত্রাণ নিতে আসা আরেক বৃদ্ধা করিমন বেগম বলেন, ‘আমরা ডুবে ছিলাম, ঘরে খাবার নেই, খাওয়ার বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় না। আমাদের এ অবস্থায় ত্রাণের সঙ্গে বড় বোতলে পানিও দিয়েছে প্রাণ। সঙ্গে শুকনো খাবার ছাড়াও অনেক কিছু আসছে। এদের জন্য আমরা অনেক দোয়া করব। কারণ আমাদের দুঃখের সময় তারা ঢাকা থেকে আমাদের জন্য ত্রাণ এনেছে। আল্লাহ এদের সবার মঙ্গল করবে আমাদের মতো গরিব, বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’
ত্রাণ বিতরণকালে জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার বলেন, ‘বন্যায় দেশের উত্তরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি এসব পানিবন্দি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। বন্যার্তদের জন্য এবার প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগিতায় প্রায় ২৫ লাখ টাকার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- চাল, ডাল, মুড়ি, পানি, বিস্কুট ও স্যালাইনসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী।’
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন এলাকায় শনিবারের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে সহায়তা করেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন এবং জাগো নিউজের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি নাজমুল হুসেন।
প্রতিবারের মতো এবারও বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে জাগো নিউজ২৪.কম। শুক্রবার সকালে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারাজে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে জাগো নিউজ টিম। এ উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতা করছে দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। শুক্রবার নীলফামারী ও লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজ থেকে চার দিনব্যাপী ত্রাণসহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়। শনিবার চলছে কুড়িগ্রাম জেলায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। এ ছাড়া গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ জেলার বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
এবারের ত্রাণসহায়তা কার্যক্রম দলে রয়েছেন জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিয়াউল হক, জাগো নিউজের সহকারী বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ, ওয়েব ইনচার্জ হাসিবুল হাসান আশিক, নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ফয়সাল খান ও নিজস্ব আলোকচিত্রী মাহবুব আলম।
চলমান বন্যায় এ পর্যন্ত দেশের ১৭ জেলায় ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ৫১৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৯৪৯টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরকারি তথ্যে বন্যায় সারাদেশে এক লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির ফসল এবং পাঁচ হাজার ২১৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বন্যার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। পরে মধ্যাঞ্চলেও বন্যার বিস্তৃতি ঘটে। উন্নতির দিকে যাওয়ার পর অতিবৃষ্টির কারণে উত্তরাঞ্চলে ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, ধরলা এবং তিস্তা নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে গঙ্গা-পদ্মা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে কমছে।
এএস/এনডিএস/এমএস