বালিশ দুর্নীতি : ৩৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৪৭ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৯

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে নজিরবিহীন ‘বালিশ দুর্নীতি’র ঘটনায় প্রকল্প পরিচালকসহ ৩৪ কর্মকর্তাকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সরকার।

বুধবার (২৪ জুলাই) সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দায়ী তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।

দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন পল্লীর বিছানা, বালিশ, আসবাবপত্র কেনা ও তা ভবনে তোলায় লাগামছাড়া দুর্নীতির প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। একটি বালিশের পেছনে ব্যয় দেখানো হয় ছয় হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে এর দাম বাবদ ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা আর সেই বালিশ নিচ থেকে ফ্ল্যাটে ওঠাতে খরচ ৭৬০ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

সারা দেশে এ কেলেঙ্কারি ‘বালিশ দুর্নীতি’ হিসেবে আলোচিত হয়। পরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নেতৃত্বে একটি এবং গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এ ঘটনায় দুটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দুটি কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে প্রতীয়মান হয়েছে যে, ৩৪ কর্মকর্তা বা ব্যক্তি এ অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।’

তিনি বলেন, ‘এরমধ্যে চার কর্মকর্তা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের। তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিবেন, আমরা সেই মন্ত্রণালয়কে লিখেছি।’

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘আর আমাদের মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দফতরের কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন। একজন অবসরে আর তিনজন পিআরএলে আছেন। তাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন আইনগত ব্যবস্থা হবে। যেহেতু তারা দায়িত্বে নেই। এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’

রেজাউল করিম বলেন, ‘যারা চাকরিতে আছেন গুরুতর অভিযোগের কারণে তাদের ১৬ জনকে সাময়িক বরখাস্তসহ বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অপর ১০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিভাগীয় মামলার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ ঘটনায় সম্পৃক্ত। তারা যে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা অতিরিক্ত নিয়েছেন, সেই টাকা উদ্ধারের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তাদের অন্য কাজের বিল পাওনা রয়েছে সেখানে থেকে এ টাকা কেটে রাখা হবে। রাষ্ট্রের একটি টাকাও কেউ অন্যায়ভাবে হজম করতে পারবে না।’

‘এ ছাড়া ওইসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপরাপর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারণ যারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে তাদের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করার সুযোগ থাকা উচিত নয়। এ জন্য তাদের ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল, ব্ল্যাক লিস্ট করাসহ যেসব পদ্ধতিগত বিষয় আছে, সেই বিষয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমার বিশ্বাস এ সিদ্ধান্ত দুর্নীতিকে না বলার জন্য জিরো টলারেন্সের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত হবে। অন্য যারা এ জাতীয় অনিয়মে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন তাদের জন্য একটা বার্তা হবে- দায়িত্বশীল পদে থেকেও রাষ্ট্রের অর্থের অপব্যবহার বা সেখান থেকে নিজে সুবিধা নেয়া বা অন্যকে সুবিধা পাইয়ে দেয়ার ঘটনাকে কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।’

‘আমার ম্যাসেজ হচ্ছে কোথাও কোনো অনিময় থাকলে আমাদের জানার সুযোগ দেন। আমরা ব্যবস্থা নেব’ বলেন রেজাউল করিম।

যারা দায়ী

দুর্নীতিতে দায়ী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর, উপ প্রকল্প পরিচালক হাসিনুর রহমান, সাব এসিস্টেন্স ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান ও মো. মাহবুব- এ চারজন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা।

পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদুল আলম, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তাহাজ্জুদ হোসেন, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আহম্মেদ সাজ্জাদ খান, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক, সহকারী প্রকৌশলী মো. রুবেল হোসাইন ও মো. আমিনুল ইসলাম, উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. ফজলে হক, উপ সহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার নন্দী, মো. রফিকুজ্জামান, উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল কবীর, উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহীন উদ্দিন, উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ, উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম, উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. রওশন আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা করা হচ্ছে।

রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) এ কে এম জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে সুস্পষ্টভাবে সরকারি ক্রয় বিধির ব্যত্যয় ঘটিয়ে দরপত্র আহ্বানের আগে মালামাল গ্রহণের গুরুতর অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত এবং বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত হওয়া ১০ কর্মকর্তা হলেন- পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ চন্দ্র সাহা, রাজশাহী গণপূর্ত সার্কেলের উপ সহকারী প্রকৌশলী খন্দকার মো. আহসানুল হক, উপ সহকারী প্রকৌশলী খোরশেদা ইয়াছরিবা, পাবনা গণপূর্তের উপ সহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার নন্দী, রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নজিবর রহমান, উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেন, উপ সহকারী প্রকৌশলী মোসা. শাহনাজ আক্তার, নির্বাহী প্রকৌশলী তানজিলা শারমিন, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম, উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. শফিউজ্জামান।

অবসরে গেছেন রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমান। পিআরএল ভোগ করছেন রাজশাহী গণপূর্ত জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. মকলেছুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম এবং গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।

এছাড়া পাবনা গণপূর্ত সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. রকিবুল ইসলাম গণপূর্ত ৩৬তম ব্যাচের সদস্য। তিনি ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পাবনা গণপূর্ত সার্কেলে যোগ দেন। ওই দিন ছিল তার প্রথম কর্মদিবস। পিডব্লিউডির রেট সিডিউল এবং অ্যনালাইসিস সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা ছিল না। এরপরও নিয়মনীতির কারণে তিনি প্রথম কর্মদিবসে এই স্বাক্ষর করেছেন। তার বিষয়টি সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা যেতে পারে বলে কমিটির সুপারিশ করেছে। অত্যন্ত নবীন কর্মকর্তা বিবেচনায় তাকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় বলে জানান মন্ত্রী।

আরএমএম/এমএসএইচ/এএইচ/জেআইএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।