তিনদিনে মুগদা মেডিকেলে ভর্তি ১১৪ রোগী
আবু সালেহ সায়াদাত আবু সালেহ সায়াদাত , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৩৪ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৯
ডেঙ্গু আতঙ্কে নগরবাসী। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। রোগীর ভিড়ে রাজধানীর অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিকে শয্যা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জ্বর হলেই রোগী নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন অভিভাবক-স্বজনরা।
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের মতো মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। জুলাইয়ের শুরু থেকে ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩৩৭ রোগী এখানে ভর্তি হয়েছেন।
গত ১ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন ভর্তি হয়েছেন আট থেকে ১৬ রোগী। ১১ থেকে ২০ জুলাই প্রতিদিন ১০ থেকে ২১ রোগী ভর্তি হয়েছেন।
২১, ২২ ও ২৩ জুলাই- তিনদিনে ১১৪ রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিনই এ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
মুগদা মেডিকেল কলেজের দায়িত্বরত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জুন মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৪০ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। জুলাইয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৮ থেকে ২০ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা ভিড় করছেন। টিকিট কেটে চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন। যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বা তুলনামূলকভাবে বেশি আক্রান্ত, চিকিৎকরা তাদের ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া যাদের বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব তাদের প্রয়োজনীয় সেবা ও ওষুধ লিখে দেয়া হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন রাজধানীর মালিবাগের বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা ছিল। হাসপাতালে এলে চিকিৎসক আমাকে ভর্তি হতে পরামর্শ দেন। এখন প্রতিদিনই প্লাটিলেট কমছে। ভর্তি হওয়ার পর দেখছি, প্রতিদিন আমার মতো ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেডগুলো পূর্ণ হওয়ার পর রোগীরা ফ্লোরেও বিছানা পেতে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
সেখানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত অপর এক রোগীর বাবা হায়দার হোসেন। তিনি বলেন, এত সাবধানতা অবলম্বন করলাম, তবুও আমার ছেলেকে ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারলাম না। আরামবাগ এলাকায় আমার বাসা। সিটি কর্পোরেশনের মশার ওষুধ ছিটানো কোনো লোকের দেখা আমরা পাইনি। নিজেরাই নিজেদের বাসাবাড়ি পরিচ্ছন্ন রেখেছি, তবুও ডেঙ্গু হলো। আমার মহল্লায়ই কমপক্ষে ২০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।
শুধু মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই নয়, ঢাকার সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের অবস্থা প্রায় একই। ডেঙ্গুর প্রকোপ নির্মূলে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন তৎপরতা শুরু করলেও তা তেমন একটা কাজে আসছে না।
এদিকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক এডিস মশা নিধন বা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও মশক নিধন বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে বিশেষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালু ও হটলাইন চালু করেছে ডিএসসিসি। সেখানে তথ্য বিশ্লেষণ করে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় জানান, সোমবার (২২ জুলাই) পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দেয়া রোগীর সংখ্যা চার হাজার ৪৪৬। এর মধ্যে জ্বরের রোগী দুই হাজার ৪০।
ডিএসসিসির পক্ষ থেকে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নাগরিকদের ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও চিকিৎসাসেবা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। হটলাইনে ০৯৬১১০০০৯৯৯ ফোন করে তথ্য জানালে স্বাস্থ্যকর্মীরা সংশ্লিষ্ট নাগরিকের বাসায় গিয়ে সেবা দিয়ে আসছেন। ডিএসসিসিতে গঠিত ৬৭টি মেডিকেল টিম বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা মনে করলে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
এছাড়া ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডের ২৫ হাজার বাসায় পরিদর্শক টিম, পরিচ্ছন্নতা টিম ও স্বাস্থ্য টিমের প্রতিনিধিরা যাবেন। যে বাসায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাবে, প্রতিনিধিরা গিয়ে তা ধ্বংস করে দেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহন করে এডিস মশা। এ জাতের মশা নালা, নর্দমার নোঙরা পানিতে জন্মায় না, বরং জন্মায় মানুষের গৃহের ভেতরে বা আশপাশের জমে থাকা অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার পানিতে। বর্ষাকালে প্রায়ই থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। ফলে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে।
এএস/আরএস/এমএআর/এমএস