পেশায় ইমাম, জিন তাড়ানোর নামে করতেন নারী-শিশু ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১৭ পিএম, ২২ জুলাই ২০১৯

রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি মসজিদের ইমাম ইদ্রিস আহাম্মেদ (৪২)। পাশাপাশি স্থানীয় একটি মাদরাসার শিক্ষকও। গত ১৮ বছর ধরে স্থানীয় অনেকের অসুস্থতায় তিনি ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ-কবজ দিতেন। ঝাড়ফুঁক নেয়াদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি। বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে ঝাড়ফুঁক ও জিনের ভয় দেখিয়ে সুন্দরী মেয়েদের জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আসছিলেন তিনি। বাদ যায়নি মাদরাসা ও মসজিদে আসা শিশুরাও।

সম্প্রতি এক ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে দীর্ঘসময় তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়ার পর রোববার (২১ জুলাই) মধ্যরাতে র‌্যাব-১ এর একটি দল রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন সৈয়দনগর এলাকা থেকে ইদ্রিস আহাম্মেদকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার মোবাইলফোন জব্দ করা হয়। ওই মোবাইলফোনে ধর্ষণ ও বলাৎকারের অনেক ভিডিও ও ছবি পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

সোমবার (২২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানা র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।

তিনি বলেন, দক্ষিণখানের স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি ও মাদরাসায় শিক্ষকতা এবং দীর্ঘদিন দক্ষিণখান এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিশেষ প্রভাব বলয় তৈরি করেন ইদ্রিস আহাম্মেদ। প্রভাবকে পুঁজি করে দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে ধর্ষণ ও বলাৎকারের মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করে আসছিলেন তিনি।

এ ব্যাপারে সম্প্রতি ভুক্তভোগী এক নারীর অভিযোগ আমলে নিয়ে ছায়াতদন্ত এবং গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র‌্যাব-১। অনুসন্ধানের পর উঠে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।

rab

র‌্যাব-১ এর সিও বলেন, অভিযুক্ত ইদ্রিস আহাম্মেদের বাড়ি সিলেট জেলায়। তিনি সিলেটের একটি মাদরাসা থেকে ১৯৯৮ সালে টাইটেল পাস করেন। এরপর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের একটি মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০০২ সালে ঢাকায় এসে দক্ষিণখানের ওই মসজিদে ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে এলাকায় ঝাড়ফুঁক এবং তাবিজ-কবজ বিক্রি করেন। তার সঙ্গে জিন আছে মর্মে প্রচার ও কুকর্মের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন। এ সুযোগ কাজ লাগিয়ে তিনি সুন্দরী নারীদের মিথ্যা ঝাড়ফুঁক ও জিনের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে অনেক নারীই আত্মসম্মান এবং কুসংস্কারের কারণে তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা কাউকে বলেননি।

তিনি বলেন, ইদ্রিস মসজিদে তার কক্ষে খেদমতের অজুহাতে কিশোরদের জোরপূর্বক বলাৎকার করেন। এছাড়া তিনি যে মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন সেখানকার ছাত্রদের মসজিদে ডেকে এনে বলাৎকার করে কৌশলে মোবাইলফোনে অপকর্মের ভিডিও ধারণ করেন। ১২ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরদের বলাৎকার করেন বলে জানা যায়। জিন ও তাবিজ করার ভয় দেখিয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে বলে পুনরায় ভিকটিমকে ধর্ষণে বাধ্য করেন। কোনো ভিকটিম অনৈতিক কাজে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখানো হয়। এতে বাধ্য হয়ে ভিকটিম অনিচ্ছা সত্ত্বেও বারবার বলাৎকারের শিকার হয়েছে।

গ্রেফতার ইদ্রিস আহম্মেদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, মসজিদের একটি বিশেষ কক্ষে তিনি ঘুমাতেন। তার সব অপকর্ম ওই কক্ষেই সম্পন্ন হতো এবং তার এই অপকর্মের ভিডিওগুলো সে তার খাদেমদের দিয়ে ধারণ করাতে বাধ্য করতেন। এ পর্যন্ত ইদ্রিস একাধিক নারীর সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন বলে স্বীকার করেছেন। জিন নিয়ে তার প্রতারণা মিথ্যা। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

জেইউ/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।