সৌদি থেকে এসে গাঁজার ব্যবসা করতে ট্রাক কেনেন তিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:০৩ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৯

সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে মাদক ব্যবসায় জড়ান মো. দুলাল মিয়া। উদ্দেশ্য অল্প পুঁজিতে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা। এজন্য ক্রয় করেন একটি মিনিট্রাক। সেই ট্রাকে করেই বালু, ইট ও মাটি সরবরাহের আড়ালে সীমান্ত থেকে আনা গাঁজার চালান ঢাকায় পৌঁছে দিয়ে আসছিলেন তিনি। চার মাস ধরে এভাবেই গাঁজার চালান সরবরাহ করে অর্ধকোটি টাকা মুনাফা করেছেন দুলাল।

তবে সর্বশেষ বুধবার (১৭ জুলাই) রাতে গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার আরিচপুর এলাকা থেকে বালুভর্তি মিনি ট্রাকটিসহ তিন মাদক চোরাকারবারীকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। পরে ওই মিনিট্রাকটি থেকে জব্দ করা হয় ৩০ কেজি গাঁজা। আটকরা হলেন, মো. দুলাল (৪২), মো. ইব্রাহিম (৩৫) ও মো. ফরহাদ (২৮)।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে একটি মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অবৈধভাবে গাঁজা পাচার করে কৌশলে রাজধানীতে নিয়ে আসছে। যা সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীসহ সারা দেশে। চক্রটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য মাদক পরিবহনে যাত্রীবাহী বাস, মৌসুমি শাকসবজি বহনকারী ট্রাক, আম, ধান, গম, ভুট্টা পরিবহনকারী গাড়ি ব্যবহার করলেও বর্তমানে মাদক পরিবহনে ট্রাকটি ব্যবহার করছে।’

চক্রটিকে ধরতে র‌্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে র‌্যাব-১ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে একটি মিনিট্রাকে করে একটি মাদকের চালান নিয়ে আসা হচ্ছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে গতিবিধি লক্ষ্য করে টঙ্গী পূর্ব থানার আরিচপুর এলাকায় মিনিট্রাকটি আটক করা হয়। সেঙ্গ তিন মাদক চোরাকারবারীকে। মিনিট্রাকটি তল্লাশি করে ৩০ কেজি গাঁজা, ৩টি মোবাইলফোন ও নগদ ৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানান, তারা সংঘবদ্ধ মাদক চোরাচালানকারী চক্রের সদস্য। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে গাঁজা নিয়ে আসেন এবং সেই চালান ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে আসেন।

চক্রের অন্যতম সদস্য দুলাল ভারত থেকে গাঁজার চালান নিয়ে আসেন। এরপর করিম নামে আরেক মাদক ব্যবসায়ীর হাত ঘুরে আটক ইব্রাহিম ও ফরহাদ মিনিট্রাকে করে গাঁজার চালান ঢাকায় আনার পথে অন্য ব্যবসায়ীদের হস্তান্তর করেন।

মাদকদ্রব্য পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত মিনিট্রাকটি মূলত মাদকদ্রব্য গাঁজা পরিবহনের কাজে ব্যবহার করলেও যেকোনো সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গ্রেফতার এড়াতে তারা গাড়িতে বিভিন্ন সময় বালু, ইট ও মাটি পরিবহন করে আসছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, চক্রটির মূলহোতা দুলাল পেশায় একজন ব্যবসায়ী। বিগত ১৪ বছর সৌদি আরবে কাটান তিনি। গত ৫ মাস আগে দেশে ফেরেন। দ্রুত অধিক মুনাফার লোভে করিমের পরামর্শে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।

মাদক পরিবহনে তিনি ওই মিনিট্রাক ক্রয় করেন। আর ওই মিনিট্রাকে করেই সীমান্ত থেকে মাদকের চালান ঢাকার মাদক কারবারীদের কাছে সরবরাহ করে আসছিলেন। গত ৪ মাসে তিনি অসংখ্যবার মাদকের চালান ঢাকায় পৌঁছে দিয়েছেন। অধিকাংশ চালান গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হস্তান্তর করা হয়। মাদকদ্রব্য বিক্রয়লব্ধ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আদান-প্রদান করেছেন বলেও জানান তিনি।

অপর আটক ইব্রাহিম জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি পোশায় একজন বালুশ্রমিক। তিনি বালু ব্যবসায়ের আড়ালে ট্রাকের হেলপারি ও মাদক ব্যবসা করে আসছিলেন। গত রাতে বালুভর্তি মিনিট্রাকটিতে গাঁজার চালান নিয়ে টঙ্গীতে নামার কথা ছিল তার।

আটক ফরহাদ জানান, তিনি পেশায় ড্রাইভার। চক্রের সঙ্গে প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছিলেন তিনি। চালান প্রতি বিশ হাজার টাকা পেমেন্ট নিতেন। এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিকবার তিনি গাঁজার চালান পরিবহন করেছেন।

আটক মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‌্যাব-১-এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম।

জেইউ/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।