কানকাটি গণহত্যা দিবস আজ


প্রকাশিত: ০৯:৫৪ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কিশোরগঞ্জের কানকাটি গণহত্যা দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা সদর উপজেলার কর্ষাকড়িয়াইল ইউনিয়নের কানকাটি গ্রামে তাণ্ডব চালায়। এদিন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় গ্রামের এক হিন্দু পরিবারের সাতজনসহ আট নিরীহ গ্রামবাসীকে। এখনো কান্না থামছে না বেঁচে থাকা সংখ্যালঘু এ পরিবারের স্বজনদের। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া অনেকে এখনো কাটাচ্ছেন পঙ্গু জীবন।

১৯৭১ সালের প্রথম দিকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও  রাজাকার-আলবদর বাহিনী কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় হামলা-লুটপাট চালায়। কানকাটি গ্রামের সুরেশ চন্দ্র সরকার ছিলেন এলাকার মাতব্বর। দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। ১১ সেপ্টেম্বর ওই গ্রামে দুঃস্বপ্নের মতো হানা দেয় স্বাধীনতাবিরোধীরা।

স্থানীয় পিডিবি নেতা মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন ও কর্ষাকড়িয়াইল ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মেনু মিয়ার নেতৃত্বে ৫০/৬০ জনের হানাদার বাহিনী হামলা চালায় কানকাটি গ্রামে। তারা অসংখ্য গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে যায়। রাজাকার আলবদর বাহিনী সৈয়দ নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ট সহযোগী সুরেশ চন্দ্র সরকার, তার দুই ভাই জ্ঞানচন্দ্র নন্দি ও জয়চন্দ্র নন্দি, ভাতিজা মধুসূদন নন্দি, দুই নাতি হর্ষবর্ধন সরকার ও বিশ্ববর্ধন সরকারকে ধরে নিয়ে পার্শ্ববর্তী ধুলদিয়া রেলসেতুর কাছে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে।

একইসঙ্গে হত্যা করা হয় কানকাটি গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বারকে। নিহত রজনীকান্ত সরকারের বড় ছেলে ছাত্রনেতা সুধীর চন্দ্র সরকার তখন মক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ভারতে ট্রেনিং নিচ্ছেন। তখনো তিনি জানতে পারেননি তার পরিবারের এ সর্বনাশের কথা।

শহীদ সুধীর সরকারের অপর পুত্র সুনীল নন্দির বয়স তখন মাত্র দুই বছর। এ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর তার আত্মীয়-স্বজন পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় ভৈরবে। কানকাটিতে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সময় অনেকে বেঁচে যান সৌভাগ্যক্রমে। তাদেরকে এখনো তাড়িত করে সেদিনের দুঃসহ ভয়াল স্মৃতি।

প্রতি বছর ১১ সেপ্টেম্বর এলেই স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে । সারা গ্রামে দেখা দেয় শোকাতুর পরিবেশ। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য এতোগুলো তাজা প্রাণ বিষর্জন দিলেও তাদের প্রতি সম্মান জানাতে সরকারিভাবে শহীদদের খোঁজখবর নিতে যায় না কেউ।

সুরেশ চন্দ্র সরকারের ছেলে সুধীর চন্দ্র সরকার বলেন, গ্রামের লোকজন প্রতিবছর তাদের বাড়িতে শোকসভার আয়োজন করে। দুই বছর আগে শহীদ সুরেশ সরকারের বিলুপ্ত বসতভিটার সামনের পুকুর পাড়ে জেলা পরিষদের অর্থায়নে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এখনো বিচার হয়নি হত্যাকারীদের।

নূর মোহাম্মদ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।