সায়মার হত্যাকারীর ফাঁসি চাইলেন বাবা
রাজধানীর ওয়ারীতে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার শিশু সায়মার বাবা আব্দুস সালাম বলেছেন, ‘আমি হয়তো আমার কন্যাকে রক্ষা করতে পারিনি; এটা আমার ব্যর্থতা। কিন্তু আমি চাই না, আর কারও বাবার বুক এভাবে খালি হোক। এ রকম নির্মমভাবে দুই ধরনের নির্যাতনে কোনো কন্যার জীবন যাক- সেটা আমি চাই না।’
শিশু সায়মা হত্যার ঘটনায় জড়িত হারুনকে গ্রেফতারের পর রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আব্দুস সালামও। সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমার মেয়ে হত্যার খবর যেভাবে দেশবাসী আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলো, তা আশা করিনি। কোনো পরিবারই তা প্রত্যাশা করে না। আপনাদের নিউজের কারণে মেয়ের হত্যাকারী দ্রুতই গ্রেফতার হয়েছে। আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি চাই। অন্তত ছয় মাসের মধ্যে যেন তার ফাঁসি কার্যকর হয়।’
সায়মার বাবা বলেন, ‘যাদের সন্তান আছে, ঘরে মেয়ে আছে, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই- এ রকম কুরুচিপূর্ণ ও পাশবিক ঘটনার শিকার যাতে না হয় সে জন্য ছেলেমেয়ের হেফাজত করবেন, রক্ষা করবেন।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি হয়তো পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা। কিন্তু আমি চাই না। আর কারও বাবার বুক খালি হোক। এ রকম দুই ধরনের নির্যাতনে কোনো শিশুর জীবন যাক।’
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় আমার মেয়ে সায়মা তার মাকে বলে গিয়েছিল, মা আমি মাত্র ১০ মিনিটের জন্য আট তলায় যাব। ওখানে ওই ছোট বাচ্চাটার সাথে খেলে চলে আসব। আইসা তোমাকে পড়াগুলো বুঝিয়ে দেব। কিন্তু ১০ মিনিট যায় মেয়ে আর ফেরে না। নামাজ পড়ে এসে মেয়েকে পাইলাম না। সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে আমার সুন্দর ফুটফুটে মেয়েটা শেষ হয়ে গেলো। আমি ভাবতে পারছি না। ভাবতে পারছি না কত কষ্ট যন্ত্রণা নিয়ে আমার মেয়েটা মরে গেল।’
‘আমি কীভাবে ধৈর্যধারণ করব জানি না। ঘটনার পর থেকে আমার স্ত্রী কোনো দানাপানি মুখে দেয়নি। পুরো ঘরে সায়মার ছবি, কাপড় চোপড়। কোনো জায়গায় বসতে পারছি না, খাইতে পারছি না। যার জীবনে এমন ঘটনা ঘটেছে সে এর যন্ত্রণা বুঝতে পারে,’ বলেন সায়মার বাবা।
তিনি বলেন, ‘আমার একটাই অনুরোধ, আজকের পর যেন এ ঘটনার রেশ থেমে না যায়। সবাই সচেতন হবেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা যেন ধামাচাপা না পড়ে।’
গত শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নবনির্মিত ভবনটির নয়তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটের ভেতরে সায়মাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
সায়মার ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে তার শরীরে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ধর্ষণের পর তাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
সোহেল মাহমুদ আরও বলেন, ময়নাতদন্তে তার যৌনাঙ্গে ক্ষত চিহ্ন, মুখে রক্ত ও আঘাতের চিহ্ন, ঠোঁটে কামরের দাগ দেখা গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ঘটনার পর বাবার দায়ের করা মামলায় গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকা থেকে ঘাতক হারুনুর রশীদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হারুন ওই ভবনের অষ্টম তলার ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের খালাতো ভাই। পারভেজের বাসায় দুই মাস ধরে থেকে তার রঙয়ের দোকানে কাজ করে আসছিল হারুন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই ভবনের ছয়তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকত সায়মা। বাবা আব্দুস সালাম নবাবপুরের একজন ব্যবসায়ী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা। ওয়ারী সিলভারডেল স্কুলের নার্সারিতে পড়ত সে।
জেইউ/এনডিএস/এমএস