জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এরশাদ
রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বলে জানিয়েছেন তার ভাই ও পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এরশাদের জন্য দোয়াও চেয়েছেন তিনি।
আজ (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদে এরশাদের রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় আয়োজিত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে কাদের এ কথা জানান।
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ আগের চেয়ে ভালো আছেন। সর্বশেষ তাকে আজকে অনেকটা সুস্থ ও সুন্দর দেখা গেছে। তাকে চিকিৎসকদের পরামর্শে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাস কৃত্রিমভাবে দেয়া হচ্ছে। রাতে ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। পেট থেকে ২০০ গ্রাম পানি বের করা হয়েছে। তিনি এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকরা খোঁজখবর রাখছেন। আজ ডায়ালাইসিস করার পর তার অবস্থা স্বাভাবিক হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত তার চিকিৎসা ওষুধনির্ভর। তার শরীরে পানি জমে ছিল তা এখন নেই। শরীরে অস্থিরতা ও শ্বাসকষ্ট ছিল তা-ও এখন নেই।’
‘তিনি যদি এভাবে কনটিনিউ করতে পারেন ও তার যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো কাজ করছে না তা যদি সঠিকভাবে কাজ করে তাহলে হয়তো তিনি সুস্থ হতে পারেন। তবে তার অবস্থা সার্বিকভাবে আশঙ্কাজনক। তার সুস্থতা নির্ভর করছে ওষুধ ও কৃত্রিম চিকিৎসার ওপর’-যোগ করেন কাদের।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা কি ভুল ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ হয়তো ভাবতে পারেন তিনি কেন হঠাৎ অসুস্থ হলেন, গাফিলতি ছিল হয়তো। কিন্তু সত্যি বলতে সিঙ্গাপুরে তার চিকিৎসা ভুল ছিল না। আমরা ভালোভাবে দেখেছি এখানকার ও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা একই।’
এরশাদের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘আগে যে সমস্যা ছিল তা দূর হয়েছে, তবে কৃত্রিমভাবে। ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে, যন্ত্রের মাধ্যমে অক্সিজেন নিষ্কাশন হচ্ছে। কিডনিতে সমস্যা ছিল তা-ও ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে কার্যকর করে কৃত্রিম চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তার চিকিৎসা-সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছিল। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা বলেছেন, এই অবস্থায় এরশাদ সাহেবকে কোনোভাবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো ঠিক হবে না। তারা নিরুৎসাহিত করেছেন। তাই আপাতত চিকিৎসা এখানেই চলবে।’
জি এম কাদের আরও বলেন, ‘তাকে এখন রক্ত দেয়া হচ্ছে। গত সাত দিনে চিকিৎসকদের পরামর্শে ২৮ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। গত ৮ ঘণ্টায় ৮ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। আরও রক্ত দেয়ার প্রস্তুতি আছে। তবে রক্ত দেয়ার পর তার শরীরে যে উন্নতি হবার কথা তা সেভাবে হচ্ছে না। রক্তের প্লাটিলেট কমছে। বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। রক্তক্ষরণ শুরু হলে রক্ত পড়া বন্ধ হবে না। উন্নতমানের চিকিৎসা চলছে। আমরা চিকিৎসায় সন্তুষ্ট। চিকিৎসকরা চেষ্ট করছেন। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে তিনি হয়তো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।’
এর আগে শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পল্লীবন্ধুর রোগ ও মুক্তি সুস্থতা কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মসজিদে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ভাই এদেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তার কাবাঘরের ভেতরে প্রবেশে একাধিকবার সুযোগ হয়েছে। ইসলামের জন্য তার অনেক অবদান রয়েছে। একটি মানুষ যত কিছুই করুক না কেন শতভাগ মানুষের সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব নয়। কেউ যদি তার কাজে কথায় চলাফেরায় বা অন্য কোনো কারণে কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে ক্ষমা করে দেবেন।’ এ সময় তিনি দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে এরশাদের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।
গত ২২ জুন থেকে ৯০ বছর বয়সী এরশাদ সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদ হিমোগ্লোবিন-স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও কিডনির জটিলতায় ভুগছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
গত সোমবার অসুস্থ সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে দেখতে সিএমএইচে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
জেইউ/এনএফ/এসআর/এমএস