ডেঙ্গুর ছোবলে চিকিৎসক দম্পতির সুখের সংসার তছনছ

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:৩৯ পিএম, ০৩ জুলাই ২০১৯

ধানমন্ডি আবাহনী ক্লাবের বিপরীত দিকের ১৯ নম্বর রোডের স্টার কাবাব হোটেল থেকে সোজা পশ্চিম দিকের রাস্তা ধরে এগিয়ে হাতের ডান পাশের গলি থেকে বেরিয়ে সোজা সামান্য সামনে এগিয়ে গেলেই রোড ১২/এ, হাউজ ১৩৪, বিটিআইটি একর্ড টাওয়ার। পাশাপাশি তিনটি সুউচ্চ অ্যাপার্টমেন্ট। অ্যাপার্টমেন্টের সামনে বেশ বড় কমন স্পেস। কিন্তু ভবনজুড়ে সুনসান নীরবতা।

গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দুই নিরাপত্তা প্রহরী বলাবলি করছিল, ‘আল্লাহর কাছ থেকে আসার সিরিয়াল আছে যাওয়ার কোনো সিরিয়াল নাই। কেমনে তারতাজা ডাক্তার ম্যাডাম দু’দিনের জ্বরে মইরাই (মরে) গেল। ভালো মানুষ বেশি দিন বাঁচে না। ডাক্তার স্যার আর পোলাপাইন তিনটার চেহারার দিকে তাকাইয়া কী যে খারাপ লাগছে বইলা বুঝাতে পারুম না।’

ডা. নিগার নাহিদ কি এই অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন- এমন প্রশ্নে নিরাপত্তারক্ষীরা চুপ হয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। নিজের পরিচয় দিয়ে বাসায় কে আছে, দেখা করতে চাই বলতেই দুজন নিরাপত্তা প্রহরী একসঙ্গে বলে ওঠেন, ‘উনারা কেউ তো বাসায় নাই। সাড়ে ৩টার দিকে লাশ দাফনের জন্য সবাই গ্রামের বাড়িতে চইলা গেছে।’

আজ (বুধবার) সকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ডা. নিগার নাহিদ। তার বাসায় খোঁজ নিতে গিয়ে এসব কথোপকথন শোনা যায়।

অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম জানান, বিটিআই একর্ড টাওয়ার-২ এর বি/১ ফ্ল্যাটে থাকতেন চিকিৎসক দম্পতি তারিক আকতার খান ও নিগার নাহিদ। তাদের এক মেয়ে ও দুই ছেলে। মেয়ে এসএসসি পাস করেছে। ছেলে দুটি স্কুলে পড়ে। দুজনই চিকিৎসক হওয়ায় খুব পেশাগত কাজে ব্যস্ত থাকতেন। খুব শান্তশিষ্ট স্বভাবের ছিলেন তারা। মাত্র দুদিন আগেও সুস্থ মানুষটি দুদিন পরে লাশ হয়ে ফিরলেন। এ কথা শোনার পর অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারা শোকাহত।

ডা. নিগার নাহিদ কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল হাসপাতালের কর্মকর্তারা যখন জানতে পারলেন তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন, তখন থেকেই তাদের মধ্যে একধরনের অজানা আশঙ্কা কাজ করছিল। আজ সকালে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে শোকের ছায়া নেমে আসে। সবার মুখে এক কথা আচার-আচরণ, কথাবার্তায় তিনি খুবই ভদ্র, মার্জিত ও ভালো ছিলেন।

প্রতিষ্ঠানটির একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, ‘ম্যাডাম খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে খুবই শোকাহত হয়েছি। আজ দুপুরেই তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া পড়ানো হয় হাসপাতালে।’

এমইউ/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।