তিন বছরে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন হালিম

ফজলুল হক শাওন
ফজলুল হক শাওন ফজলুল হক শাওন , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১১:১১ এএম, ০১ জুলাই ২০১৯

সৌদি খেজুর চাষ করে কয়েক বছরে কোটিপতি বনে গেছেন মানিকগঞ্জের আব্দুল হালিম। তার এ সাফল্যে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর অনেকে। অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক ও আগ্রহীরা তার কাছে যাচ্ছেন এবং বুদ্ধি-পরামর্শ নিচ্ছেন। বৃক্ষ মেলার নিজের স্টলে বসে খাতা-কলমে হিসাব নিকাশ করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন কীভাবে কোটিপতি হওয়া সম্ভব।

বৃক্ষমেলায় গিয়ে দেখা গেল, স্টলে বসে নিজের কোটিপতি হওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন আগতদের কাছে। তাকে নিয়ে একটি বেসরকারি টিভিতে প্রচারিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বারবার দেখানো হচ্ছে।

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ‘সৌদি খেজুর নার্সারি অ্যান্ড এগ্রো’-এর প্রোপাইটর মো. আব্দুল হালিম স্টল নিয়েছেন এবারের বৃক্ষমেলায়। এ স্টলটিতে অন্যান্য গাছ থাকলেও খেজুরের চারার জন্য বিশেষভাবে আলোচিত।

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ব্রিজের কাছে ‘সৌদি খেজুর নার্সারি অ্যান্ড এগ্রো’ এর অবস্থান। এই খেজুর চাষ প্রকল্পের মাধ্যমে চাষি হালিম এখন পুরোপুরি কোটিপতি বনে গেছেন। দেশি খেজুরের চারার চেয়ে সৌদি আরবের এই খেজুরের চাহিদা ৮ গুণ বলে জানিয়েছেন সফল চাষি হালিম।

Date-(2)

তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা সেতু সংলগ্ন নন্দিনী সিটিতে তিন বিঘা জমিতে নার্সারির চাষ শুরু করেন তিনি। সেখানে খেজুরের কয়েকটি চারা সংগ্রহ করেন সৌদি আরবের এক বন্ধুর মাধ্যমে। শুরু হয় তার সৌদির খেজুর চাষ। কয়েক মাসের মধ্যে বাঁশের কুরুলের মতো চারা বৃদ্ধি পেয়ে সেই কয়েকটি চারা থেকে এক বছরে রূপ নেয় ১০ হাজার চারায়। ভাগ্য খুলে যায় তার। এখন এক একটি চারার বাজার মূল্য দুই হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

দুই হাজার টাকা ধরে হিসাব করলে তার চারার মূল্য দাঁড়ায় ২ কোটি টাকা। অন্যদিকে, তার বাগানে রয়েছে বড় একটি গাছ। যার মধ্যে একটিতে খেজুর ধরেছে। এক বছরের মধ্যে তিনি দেড় কোটি টাকার খেজুরে চারা বিক্রয় করেছেন।

এবার বৃক্ষমেলায় অংশগ্রহণ করেই দ্বিতীয় দিন তিনি ২টি খেজুর গাছের চারা (বড় এক বছর পরেই খেজুর ধরবে) ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এই খেজুর গাছ দুটি ক্রয় করেছেন সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি তার বাড়িতে লাগানোর জন্য গাছ দুটি কিনেছেন। এর আগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য কয়েকটি গাছ নেয়া হয়েছিল। সেসব গাছে খেজুর ধরছে বলে জানান আব্দুল হালিম। এ ছাড়া জাতীয় সংসদেও তার দেয়া একটি গাছে প্রায় ৩ মণ খেজুর ধরেছে বলে জানান তিনি।

আব্দুল হালিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে ১০০টি খেজুরের চারা লাগানো যায়। এই ১০০টি চারার প্রতিটি থেকে ১০টি করে নতুন চারা গজাবে। তখন চারার পরিমাণ দাঁড়াবে ১০০০। প্রত্যেকটি চারা পনের হাজার টাকা করে বিক্রি করলে মোট আসে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই চারা হওয়া এবং বিক্রি করতে সময় লাগবে তিন বছর। পাঁচ বছর পর প্রতিটি গাছে ২০০ কেজি খেজুর হলে ১ হাজার হাজার গাছে ২০ হাজার কেজি খেজুর হবে। প্রতি কেজি খেজুরের দাম ১ হাজার টাকা হলে ২০ হাজার কেজি খেজুর বিক্রি করে পাওয়া যাবে কোটি টাকা। চারা বিক্রির ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ হিসেবে ধরলে ৬ বছরে নিট লাভ হবে ২ কোটি টাকা। এরপর থেকে খরচের পালা খুব কম শুধু লাভ আর লাভ।’

Date

এক প্রশ্নের জবাবে সফল এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এটি মূলত পবিত্র দেশের খেজুর। তাই এই খেজুর চাষে আগ্রহের এটাও একটা কারণ। অর্থনৈতিকভাবেও এটা অনেক লাভবান।’

তিনি বলেন, ‘আমি ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেখে দেখে চাষ শিখেছি। এরপর নিজের মতো মাটি সারের উপযোগী করে তুলি, যার ফলেই এ দেশে এই খেজুর হয়েছে। এখন আমার নার্সারিতে আজোয়া, মরিয়ম ও বারহী জাতীয় তিন জাতের দশ হাজার চারা রয়েছে। যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা।’

এফএইচএস/এসআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।