অপশক্তি দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা করছে


প্রকাশিত: ০৪:০৩ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোন অপশক্তি-পরাশক্তি না, ঘরের শক্রু বিভীষণ। এ অপশক্তি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। দেশের বাইরের না, দেশের অভ্যন্তরেরই কিছু অপশক্তি ও কারো কারো ব্যক্তি স্বার্থে আঘাত লাগায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারা অপপ্রচার চালায়।

বুধবার জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র সদস্য হাজি মো. সেলিমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে না দেয়ার পিছনে কোন অপশক্তির হাত আছে কি না হাজি সেলিম জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী এ জবাব দেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি নাম উল্লেখ না করেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মো. ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী যারা সেই জামায়াতে ইসলামীসহ এরা অর্থ দিয়ে লবিষ্ট রেখে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার বিদেশে চালাচ্ছে। যেখানে বিএনপি-জামায়াত মিলে অর্থ দিয়ে লবিষ্ট দিয়ে বাংলাদেশের  ভাবমূর্তি নষ্ট এবং জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশের সবকিছু নষ্ট করবার জন্য উঠেপড়ে লেগে গেছে।

জিএসপির মাধ্যমে বাংলাদেশ বেশি সুবিধা পেতো না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে তারা বন্ধ করে দিয়েছে এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকারক। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে বহু খেলা তারা খেলতে চেয়েছে। ওই ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ম নৌবহরও পাঠিয়েছিল। তারপরও বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কিন্তু ঠেকাতে পারেনি। এখন জামায়াত-বিএনপি বা ব্যাংকের সাবেক এমডি মিলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করাসহ বহু অপকর্ম করেছে তবে আমাদের অগ্রযাত্রা কিন্তু বন্ধ করতে পারেনি।

হাজি মো. সেলিমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে পরাশক্তি না, বরং কিছু অপশক্তি দেশের বাইরের না, দেশের অভ্যন্তরেরই কারো কারো ব্যক্তি স্বার্থে আঘাত লাগায় দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে এই দেশে এক সময় যিনি প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন, বিরোধী দলের নেতাও ছিলেন যদি এখন তিনি এই ধরনের কোন পদে নেই কিন্তু একটি দলের নেতা। সেই দলের নেতা আমেরিকা সরকারের কাছে চিঠি দিয়ে জিএসপি যাতে বন্ধ হয় তার আবেদনও করেছিলেন। তিনি একটি আর্টিকেল ওয়াশিংটনে কোন এক অখ্যাত পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন যাতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। কোনো কোনো ব্যক্তি হয়তো একটা পদের জন্য যেমন একটা ব্যাংকের সামান্য একটা এমডির পদ, মামলা করে সেই পদ হারানোর পর তিনি এতোই ক্ষিপ্ত হয়ে যান, সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে গর্ভমেন্টের বিরুদ্ধে সমানে অপপ্রচার চালায়।

বিশেষ করে স্বাধীনতা বিরোধী যারা সেই জামায়াতে ইসলামীসহ এরা অর্থ দিয়ে লবিষ্ট রেখে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার বিদেশে পরিচালিত করছে। যেখানে বিএনপি-জামায়াত মিলে অর্থ দিয়ে লবিষ্ট দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট এবং বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশের সবকিছু নষ্ট করবার জন্য উঠেপড়ে লেগে গেছে। কাজেই কথায় বলে ঘরের শক্রু বিভীষণ।

দেশের কথা যে চিন্তা করেনা, মানুষের কথা চিন্তা করেনা, আমাদের শ্রমজীবী মানুষের কথা চিন্তা করেনা তাদের দলীয় স্বার্থ ব্যক্তি স্বার্থটাই বেশি বড় হয়ে দেখো দেয়। তারাই কিন্তু এই ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে।

কাজেই অপশক্তি পরাশক্তি না, ঘরের শক্রু বিভীষণ- অপশক্তি তারাই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, রায়ও কার্যকর করেছি। তাদেরও অপপ্রচার আছে। এই অপপ্রচারে কাজ হবে না।  উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাবে রফতানিও বৃদ্ধি পাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এটা মনে রাখা উচিত যেই বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আসার আগে ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন ডলার। যা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার  বিনিয়োগে আমরা শুরু করি। প্রায় দুই বিলয়নের মতো বিনিয়োগ এখানে তাদের আছে। কাজেই বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে বহু খেলা তারা খেলতে চেয়েছে। ওই ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ম নৌবহরও পাঠিয়েছিল। তা এসেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে। তারপরও বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, বিজয় অর্জন করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কিন্তু ঠেকাতে পারেনি। কাজেই  এখন জামায়াত বিএনপি বা  ব্যাংকের সাবেক এমডি মিলে  বাংলাদেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করা বহু অপকর্ম তারা করেছে, আমাদের অগ্রযাত্রা কিন্তু বন্ধ করতে পারেনি। পদ্মাসেতুর জন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেব আমরা সেটাও কিন্তু অহেতুক বন্ধ করেছিল। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণ বন্ধ রাখতে পারেনি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে পেরেছি। আমরা ছোট একটা দেশ হতে পারি। কিন্তু এই দেশ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের মানুষ কারো কাছে মাথা নোয়াবে না। ওই ধরনের দালাল ছাড়া যাদের কোনো দেশপ্রেম নেই দেশের প্রতি কোনো কর্তব্য বোধ নেই, যারা শুধু লুটপাট, দুর্নীতি মানুষ খুন হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্র এতেই যারা জড়িত তারা বাংলাদেশের বহু ক্ষতি করেছে।
ভবিষ্যতে আর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশের জনগণ এখন সচেতন।  

এ কে এম রহমতউল্লাহ জিএসপি সুবিধা সম্পর্কিত লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবার বিশ্বের ১২২টি দেশকে জিএসপি সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশকে দেয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক ব্যতীত অন্যান্য পণ্যে জিএসপি সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশাধিকার ছিল। বাংলাদেশ কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের বাজের রফতানিকৃত পণ্যেও ৯০ শতাংশ এর বেশি হচ্ছে টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল পণ্য।

এ দেশে তৈরি পোশাক ও চিংড়ি খাত এবং ইপিজেডভুক্ত শিল্প কারখানায় শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এমন অভিযোগ করে গত ২৭ জুন ২০১৩ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছে। জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে বিভিন্ন শর্ত সম্বলিত ‘বাংলাদেশ অ্যাকশন প্ল্যান-২০১৩’ বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়। প্রধানমন্ত্রী ওই অ্যাকশন প্ল্যানের শর্তগুলোও তুলে ধরেন।

প্ল্যানের শর্তের মধ্যে রয়েছে- পরিকল্পনায় আইনগত ও নীতিগত ব্যবস্থা, প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন, রফতানিযোগ্য সকল তৈরি পোশাক কারখানা ভবনের ফায়ার, ইলেকট্রক্যিাল ও স্ট্রাকচারাল বিষয়ক যাচাই, প্রশাসনিক পদক্ষেপ, শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার, দু’টি এনজিও’র কার্যক্রম পুনরায় চালু করা, জনসাধারণের প্রবেশযোগ্য ডাটাবেজ প্রতিষ্ঠা, শ্রম ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন ত্বরান্বিত করা, হটলাইন প্রতিষ্ঠা করা, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়নে বিশেষ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন, চিংড়ি সেক্টওে শ্রম অধিকার ও নিরাপদ কর্র্মপরিবেশ রক্ষা করা।

এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন গৃহীত পদক্ষেপ তুলে বলেন, গত ১৫ নভেম্বর ২০১৩, ১৫ এপ্রিল ২০১৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে উক্ত অ্যাককশন প্ল্যান বাস্তবায়নের অগ্রগতি ‘ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর)’ বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার উক্ত অগ্রগতি রিভিউপূর্বক অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং চলমান কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি সময়ে সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অবহিত করা হচ্ছে এবং অ্যাকশন প্ল্যানের অধিকাংশ বিষয় বাস্তবায়ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, অবশিষ্ট বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে ‘চিপ ইন্সপেক্টর অব ফ্যাক্টরিজ অ্যান্ড এস্টাবলিশমেন্ট’ অফিস পুনর্গঠনসহ ২২৫ জন পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চালু রফতানিমুখী প্রায় ৩ হাজার ৬৮৫টি গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে অ্যালায়েন্স, অ্যাকোর্ড ও জাতীয় টিমের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার ৩৭৫টি গার্মেন্টস কারখানার অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও স্ট্রাকচারাল বিষয় পরিদর্শন করানো হয়েছে। তার মধ্যে ৩৪টি কারখানা ক্রটিপূর্ণ পাওয়ায় ‘রিভিউ প্যানেল’ এর সুপারিশ অনুযায়ী উক্ত কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
অবিলম্বে সকল কারখানার অগ্নি, ও বৈদ্যুতিক ও ভবনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রাথমিক পরিদর্শন কার্র্যক্রম শেষ হবে।’

এ লক্ষ্যে ‘গত ৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে ইপিজেড শ্রম আইন-২০১৪ এর খসড়া মন্ত্রিপরিষদে নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ আইনও বিধিগত কার্যক্রম শেষে উক্ত খসড়া আইন বিল আকারে অবিলম্বে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত অ্যাকশন প্লান বাস্তবায়নের মাধ্যমে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

এইচএস/এসএইচএস/এএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।