সুপারশপের পণ্যের বিষয়ে এ কী শোনালেন সারওয়ার আলম!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৩৭ পিএম, ২৭ জুন ২০১৯

‘সুপারশপ কিংবা সুপার স্টোরগুলোতে আমরা খাদ্যপণ্যের নামে কী আমদানি করে আনছি? সেসবের সোর্স কী? আমদানিকৃত পণ্যের মেয়াদ, মান, এডালটেরেশন (ভেজাল) কিনা তা কি চেক করছি? বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সুপারশপসহ বড় বড় দোকানে যা বিক্রি করছি তাতে আমরা সন্তানদের কাছে অপরাধী। কিটক্যাটের মতো শিশুদের প্রিয় চকলেট দেখেছি অধিকাংশই মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ।’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর লা মেরিডিয়ানে বাংলাদেশ রিটেইল ফোরাম আয়োজিত ‘সুপারস্টোরে পণ্যের মান রক্ষণাবেক্ষণ’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। এ সময় স্বপ্ন, মিনা বাজার, আগোরাসহ একাধিক সুপারশপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সারওয়ার আলম সুপারস্টোরের সাপ্লাই চেইন ও অভ্যন্তরীণ সমস্যা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ রিটেইল ফোরামের আহ্বায়ক শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সারওয়ার আলম বলেন, ‘আমদানিকৃত পণ্য কীভাবে আসছে, সোর্স কী, মেয়াদ আছে কিনা, মান কেমন, তা জানা থাকতে হবে সুপারস্টোর কর্তৃপক্ষকে। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ও ছাড়পত্র রয়েছে কিনা, আমদানিতে এলসি রয়েছে কিনা, ইনভয়েস, কাস্টমস ছাড়পত্র, পণ্যের লোগো ও মেয়াদের তারিখ ঠিক রয়েছে কিনা তা চেক করতে হবে। কারণ একাধিক অভিযানে আমি এসবের ব্যত্যয় দেখেছি।’

নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযানে দেখেছি, পণ্য ২ থেকে ১০ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ, অননুমোদিত, চোরাইপথে আনা ও কাস্টম ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া পণ্য, মানহীন, ভেজাল ও পচা মাছ-মাংস, সফট ড্রিংস, খেজুরসহ ফলমূল, কসমেটিক্স, তরল ও গুঁড়ো দুধসহ নানা পণ্য আমদানি করে তা মজুত ও বিক্রি করা হচ্ছে।’

‘বাইরের জুস বিক্রিতে সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু এরপরও বিক্রি হচ্ছে হোক কিন্তু সেটাতো মানসম্পন্ন হতে হবে। সেটা নেই। মেয়াদ নেই। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অধিকাংশ পণ্যের ডেট নতুন করে বসানো হয়েছে। কখনো নতুন প্যাকেটিংয়ে মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির প্রমাণ পেয়েছি।’

এক থেকে তিন মাস মেয়াদ আছে এমন গুঁড়ো দুধ আমদানিতে আগ্রহ বেশি সুপারস্টোরগুলোর দাবি করে সারওয়ার আলম বলেন, ‘আমদানিকৃত গুঁড়ো দুধ বন্দরে আসার পর ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই মেয়াদ শেষ হয় এসব গুঁড়ো দুধের। আবার শিশুদের দুধ আমদানির পর মেয়াদ শেষ কিংবা ১-৩ মাস মেয়াদ আছে এমন দুধ আমদানি করা হচ্ছে। কিটক্যাটের মতো জনপ্রিয় শিশুদের চকলেটের মেয়াদ ও মান অভিযানে পাওয়া যায়নি। আমরা শিশুদের কাছে কি অপরাধী হচ্ছি না? আমরা যারা ব্যবসা করি তারাও কনজ্যুমার। আমাদের শিশুরা তাই খাচ্ছে। শিশুদের কাছে অপরাধবোধের জায়গা থেকে হলেও সচেতনতার সঙ্গে এসব কাজ থেকে সরে আসা উচিত।’

সফট ড্রিংস ও কসমেটিক্স আইটেমের ক্ষেত্রে একই অবস্থা বলে জানান একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘কসমেটিক্স আইটেমে জালিয়াতি বেশি। একে তো বেশিরভাগ আসে লাগেজ পার্টির মাধ্যমে তাও আবার মেয়াদের তারিখ পরিবর্তন করে নতুন মেয়াদের তারিখ বসানো হচ্ছে। যারা সুপারশপ চালান তারা যদি আমদানির কাগজপত্র দেখেন এলসি দেখেন তাহলে এ ধরনের জালিয়াতি হয় না। ভোক্তারা ভেজাল খাদ্যটা পায় না।’

কোল্ড স্টোরেজে বসে মেয়াদের ডেট টেম্পারিং করা হচ্ছে বলে জানান সারওয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে মেয়াদ শেষ এমন মাংস জব্দ করেছি। এসব স্বপ্ন, আগোরা, মিনা বাজারসহ সব সুপারশপ তো বটেই বিক্রি হয়েছে পাঁচতারকা হোটেলেও। চিন্তা করতে পারেন আমরা আসলে কী খাচ্ছি?’

‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে দেখেছি, ভালো পণ্যের সঙ্গে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য, সঠিক ও শক্ত নজরদারি নেই, অডিট নেই, পরে কেনা পণ্য আগে বিক্রি হচ্ছে আর আগে কেনা পণ্য পড়ে থাকছে। ২০ টাকার পণ্য লেখা থাকলেও বিক্রির রিসিভ কপি হাতে নেওয়ার পর দেখানো হচ্ছে ২৪ টাকা। এটা ভোক্তা অধিকারের লঙ্ঘন’-যোগ করেন তিনি।

সারওয়ার আলম বলেন, ‘ভোক্তা কিনে নিজে ফ্রিজআপ করে ছয় মাস ধরে খেতে পারেন তাতে সমস্যা নেই, কিন্তু কোনো সুপারশপ মাছ কিংবা মাংস তিনদিনের বেশি রাখতে পারবেন না। এটা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও নিরাপদ খাদ্য নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। কখন কোনটা কেনা তা মাছ কিংবা মাংসের প্যাকেটের গায়ে দামসহ লেখা থাকতে হবে। লিকুইড আইটেমের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় যেমন রাখতে হবে তেমনি মেয়াদোত্তীর্ণ, ভেজাল ও পচা লিকুইড আইটেম সেলফে রাখাই যাবে না। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির জন্য নয় লেখা ঝুলিয়ে রাখতে হবে। প্রতি ঘণ্টায় চেকিং ও ক্লিনিং করতে হবে।’

এক শাখা দিয়ে আরেক শাখাকে পরিদর্শন ও অডিট করালে অনেক অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান হবে বলে উল্লেখ করেন র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। এ ছাড়া এসিআই লজিস্টিকসেরর বিজনেস ডিরেক্টর সোহেল তানভীর খান, ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ বিন তাজ, স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির, সেন্টার ফর সার্ভিস কোয়ালিটি এনহান্সমেন্টের (সিএসকিউই) পরামর্শক ড. তামজিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জেইউ/এসআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।