বাবার কাছে পাওনা টাকা না পেয়ে ছেলেকে হত্যা
ঢাকার টঙ্গি পূর্ব থানাধীন মাছিমপুর এলাকায় ওয়ার্কসপে মাদ্রাসা ছাত্র সাইফ (১৪) খুনে জড়িত হারুন অর রশিদকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে র্যাব। অভিযুক্ত হারুনকে গ্রেফতারের পর র্যাব বলছে, বাবা আব্দুল কাইয়ুমের কাছে টাকা পেতো হারুন। সেই পাওনা টাকা না পেয়ে ছেলে সাইফকে হত্যা করেন হারুন।
গত ২২ জুন টঙ্গী পূর্ব থানাধীন মাছিমপুর সাকিনস্থ ‘নিউ মা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ’ নামক একটি লেদ মেশিদের দোকানে মো. সাইফুর রহমান সাইফ নামে ওই মাদ্রাসাছাত্রকে হত্যা করা হয়।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত সাইফ চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। সে স্থানীয় উত্তরা ৯নং সেক্টরস্থ এমদাদুল উলুম মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে পড়ালেখা করতো।
হত্যাকাণ্ডের পর মা শহিদা বেগম বাদী হয়ে টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৫৯।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, নিহত মাদ্রাসা ছাত্র সাইফের বাবা আব্দুল কাইয়ুম স্থানীয় হারুন আর রশিদের কাছ থেকে ৩ লাখা ৫০ হাজার অগ্রিম ও মাসিক ১৫ হাজার টাকা কিস্তিতে তার একটি ওয়ার্কসপ ভাড়া নেন।
গত মে মাসের ভাড়া পরিশোধ না করায় হারুন অর রশিদ কাইয়ুমকে তাগাদা দিতে থাকেন। কিন্তু তিনি ভাড়া পরিশোধে ব্যর্থ হন।
জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১ সিও বলেন, প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ভাড়া পরিশোধ করে আসছিলেন আব্দুল কাইয়ুম। তবে মে মাসের ভাড়া পরিশোধে ব্যর্থ হন। তাগাদা দিলেও টাকা দেননি। ২২ জুন ১১টার দিকে দোকানের মালিক হারুন অর রশিদ ৫/৬ জনসহ ভাড়া নিতে আসেন। টাকা না পেয়ে ভাড়া না দেয়া পর্যন্ত দোকান বন্ধ রাখার কথা বলে চলে যান। সাইফ হত্যাকাণ্ডের দিনে বাবা আব্দুল কাইয়ুম দুপুর ১টার দিকে সাইফকে দোকান খুলতে বলে টাকা সংগ্রহে বের হন।
তবে হারুন অর রশিদ ম্যানেজারের মাধ্যমে জানতে পারেনে, দোকানটি পুনরায় খোলা হয়েছে। ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বেশ কয়েকজনকে নিয়ে ওই ওয়ার্কসপে যান। মালিককে না পেয়ে ছেলে সাইফের উপর চড়াও হন। মারধরের মধ্যে সাইফ চলন্ত লেদ মেশিনে পড়ে গেলে সবাই ভয়ে দোকানের স্যাটার বন্ধ করে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
পরে বন্ধ দোকানটির ভেতর চলন্ত লেদ মেশিনের শব্দ পেয়ে পাশ্ববর্তী দোকান ও স্থানীয় লোকজন ভিতরে প্রবেশ করলে সাইফকে মেশিনের সাথে প্যাঁচানো ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় দেখে। গুরুতর আহত অবস্থায় টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে র্যাব-১ এর একটি দল গত রাতে টঙ্গী পূর্ব থানাধীন ঘাপরিয়া মাদ্রাসায় আত্মগোপনে থাকা হারুন অর রশিদকে গ্রেফতার করে। তিনি ‘মুন সান প্রোপার্টিজ’ নামক একটি ভবন নির্মানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী। পাশাপাশি মাছিমপুর এলাকায় ভাড়ায় তার বেশ কয়েকটি দোকান আছে। এসব দোকানের একটিতে ভিকটিমের পিতা দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্কসপ পরিচালনা করে আসছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হারুন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
জেইউ/এনএফ/এমকেএইচ