তিউনিসিয়া থেকে ফিরলেন সাগরে ভাসা ১৭ বাংলাদেশি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:২০ পিএম, ২১ জুন ২০১৯

তিন সপ্তাহ ধরে তিউনিসিয়ার সাগরে নৌকায় ভাসা ৬৪ বাংলাদেশির মধ্যে ১৭ জন আজ দেশে ফিরেছেন। শুক্রবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে কাতার এয়ারওয়েজের কিউআর-৬৩৪ ফ্লাইটে করে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

বিমানবন্দরের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তা মাহবুব জানিয়েছেন, অনটাইমে তারা ঢাকায় পৌঁছেছেন।

জানা গেছে, ঢাকায় পৌঁছার পরপরই গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা বিমানবন্দরের ভেতরেই তাদের কোনো একটি কক্ষে নিয়ে যান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বাংলাদেশের কোন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় তারা তিউনিসিয়া গিয়েছিলেন, সে তথ্য নেয়া হচ্ছে।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের হেড শরিফুল হাসান জানান, তিন সপ্তাহ ধরে তিউনিসিয়ার সাগরে ভেসে থাকা ৬৪ বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসতে রাজি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ জন আজ বিকেলে কাতার এয়ারওয়েজের বিমানযোগে তিউনেশিয়া থেকে ঢাকায় পৌঁছেন।

আরও পড়ুন>> অবশেষে দেশে ফিরতে সম্মত ভূমধ্যসাগরে আটকে থাকা ৬৪ বাংলাদেশি

তিন সপ্তাহ ধরে তিউনিসিয়ার সাগরে একটি নৌকায় ভাসছিলেন ৭৫ জন, যাদের মধ্যে ৬৪ জনই বাংলাদেশি। নৌকাটি তিউনিয়ার উপকূলের কাছে পৌঁছলেও কর্তৃপক্ষ তীরে নামার অনুমতি দেয়নি।

তিউনিসিয়া কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের শরণার্থী কেন্দ্রে আর জায়গা দেয়া সম্ভব নয়। ফলে ওই নৌকাটি উপকূলীয় জারজিস শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সাগরে ভাসতে থাকে। পরে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা সেখানে যান।

শরিফুল হাসান বলেন, ভূমধ্যসাগর দিয়ে এভাবে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে সংকটে ফেলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার আরও নজরদারি দরকার। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি আজকে যারা এসেছেন, তাদের ১৭ জনের মধ্যে ৮জনই মাদারীপুরের। বাকি ৯ জনের মধ্যে ৪ জন চারজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। বাকি ৫ জনের বাড়ি শরীয়তপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ জেলায়। এ ধরনের মানবপাচার যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে।

এদিকে রেডক্রিসেন্ট সূত্র ধরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, আটকে পড়া বাংলাদেশিরা দেশে ফিরে যাবেন, দূতাবাসের পক্ষ থেকে তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষকে এমন নিশচয়তা প্রদানের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের ১৮ জুন সন্ধ্যায় জারজিস বন্দরে নামার অনুমতি দেয়। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কোনোক্রমেই তাদের জারজিস বা মেডেনিনে থাকার অনুমতি প্রদান করেনি। এমতাবস্থায় উদ্ধার বাংলাদেশিদের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তিউনিসে এনে রেড ক্রিসেন্ট ও আইওএম এর যৌথভাবে পরিচালিত শেল্টার হাউজে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেশে পাঠানো হচ্ছে।

এর মধ্যে প্রথম দফায় ২০ জনকে টিকিট দিলেও ৩জন আসতে রাজি হননি। বাকি ১৭ জন আজ বিকেলে ঢাকায় আসেন।

জানা গেছে, ৩ জন দেশে আসতে রাজি না হওয়ার বিষয়টি নতুন দুশ্চিন্তার কারণ। একইভাবে শেল্টার হাউজে অবস্থানরত আরও কিছু বাংলাদেশি এ মুহূর্তে দেশে আসতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। বিষয়টি অত্যন্ত চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা সবাইকে দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রাজি করানোর পরই তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষের নিকট নিশ্চয়তা দেয়া হয়।

দূতাবাসের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, কাপড়চোপড় এবং তিউনিসে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এ ছাড়া তাদের সবার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেশে কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উদ্ধার সবাই দেশে ফিরে না আসলে পরবর্তীতে এরকম দুর্ঘটনায় তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

আরএম/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।