লাকসাম-মনোহরগঞ্জের ৯৮ ভাগ নলকূপের পানিতে আর্সেনিক


প্রকাশিত: ০৫:২৫ এএম, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কুমিল্লার লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলার ২৮ গ্রামের প্রায় সাড়ে নয় হাজার মানুষ আর্সেনিকে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উভয় উপজেলার প্রায় ৯৮ ভাগ গভীর ও অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, আমেরিকার শিকাগো ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আর্সেনিক গবেষণা প্রকল্প বাংলাদেশে ২০০৭ সালের মে থেকে কার্যক্রম শুরু করে। এরপর থেকে ওয়ার্ল্ড ভিশন, দ্যা হাঙ্গার প্রজেক্ট, ব্র্যাকসহ একাধিক দাতা সংস্থা লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আর্সেনিকমুক্তকরণে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রাথমিক পর্যায়ে শতাধিক আর্সেনিক রোগী চিহ্নিত করা হয়। ওয়ার্ল্ড ভিশন এ দুই উপজেলায় ২৬ হাজার লোক নিয়ে গবেষণা ও আর্সেনিকমুক্ত কার্যক্রম শুরু করে। এ পর্যন্ত লাকসাম উপজেলায় সাড়ে পাঁচ হাজার ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় চার হাজার লোককে আর্সেনিক আক্রান্ত হিসেবে তারা চিহ্নিত করে।

এরই মধ্যে এডিপি ওয়ার্ল্ড ভিশন লাকসাম পৌরসভার নয়টি ও উপজেলার বাকই, মুদাফফরগঞ্জ, আজগরা ইউনিয়নে ৫১টি কমিউনিটি ব্যাচ আর্সেনিক রিম্যুভাল ইউনিট (সিভিএআরভিইউ) টিউবওয়েল স্থাপন করেছে। এতে পাঁচ হাজার ৮০টি পরিবারের প্রায় ২৬ হাজার লোক আর্সেনিকমুক্ত পানি পানের সুবিধা ভোগ করছেন।

Arcenikএনজিও সূত্রে জানা যায়, লাকসাম উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম ছাড়াও লাকসাম উপজেলা সদর, ভাকড্ডা, কামড্ডা, পাশাপুর, বামন্ডা, শিংজোড়, সালেহপুর, কান্দিরপাড়, আউশপাড়া, গোবিন্দপুর, মোহাম্মদপুর, আতাকরা, ডুমুরিয়া ও পৌর এলাকার পশ্চিমগাঁও, গাজীমুড়া, ফতেপুর গ্রামের মানুষ আর্সেনিক আক্রান্ত। মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ১১৭টি গ্রামের প্রায় আট ভাগ মানুষ আর্সেনিকের কবলে রয়েছে।

মনোহরগঞ্জ উপজেলার ভোগই, দাঁড়াচৌ, বাকরা, লক্ষণপুর, ভাউপুর, হাঁটিরপাড়, খানাতুয়া, মৈশাতুয়া, তাহেরপুর, দিশাবন্দ, চিকোটিয়া, বড়কেশতলা ও রাজাপুর গ্রামে আর্সেনিক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। অপর একটি সূত্র জানায়, লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলায় আর্সেনিক রোগীর মাঝে গবেষণা ও রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা প্রায় দেড় হাজার সনোফিল্টার ও বিপুল পরিমাণ ওষুধ বিতরণ করেছে। তারা সভা-সেমিনারের মাধ্যমে এ রোগের প্রতিকার বিষয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরে।

যুক্তরাষ্ট্রের আইসিডিডিআরবি, ভার্টমাউন্ট মেডিকেল স্কুল এ গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। ইউনিসেফ ও ভিপিএইচই এর সহায়তায় আর্সেনিক গবেষণা কাজে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সহযোগিতার কথা থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে এদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

লাকসাম এডিবি ওয়ার্ল্ড ভিশন সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে আগামী কিছুদিনের মধ্যে আর্সেনিক বিষাক্ততা মহাদুর্যোগ হিসেবে দেখা দেবে। লাকসাম ও মনোহরগঞ্জে প্রায় ৯৮ ভাগ টিউবওয়েল আর্সেনিকযুক্ত হয়ে পড়েছে।

এ সংস্থাটি তিন বছর মেয়াদি আর্সেনিকমুক্ত নয়টি টিউবওয়েল স্থাপনের মধ্য দিয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১টিতে। প্রতিটি টিউবওয়েল থেকে আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানির সুবিধা ভোগ করছে ১২০ থেকে ১৫০ জন।

Arcenik

আর্সেনিক আক্রান্ত লাকসাম উপজেলার একাধিক ব্যক্তি জাগো নিউজকে জানান, তাদের হাত-পায়ের তালু ফেটে গেছে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালো ক্ষত দেখা দিয়েছে। তবে তারা বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।

এসব বিষয়ে লাকসাম এডিবি ওয়ার্ল্ড ভিশন ম্যানেজার পিন্টু এলবার্ট পিরিচ জাগো নিউজকে জানান, এ অঞ্চলের মানুষকে আর্সেনিকমুক্ত করতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অন্য এনজিওগুলো এ কাজে এগিয়ে এলে এলাকাটিকে দ্রুতই আর্সেনিকমুক্ত ঘোষণা করা সম্ভব হবে।

মো. কামাল উদ্দিন/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।