যে কারণে বাতিল হলো টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে নতুন পে-স্কেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। নতুন এই পে-স্কেল গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
বেতন ও চাকরি কমিশন ২০১৩, সশস্ত্রবাহিনী বেতন কমিটি ২০১৩ এ সংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশের আলোকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো ও ভাতা অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। তবে নতুন বেতন কাঠামোতে থাকছে না টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নানা জটিলতা ও আর্থিক বৈষম্য দূর করতেই জাতীয় বেতন কাঠামো থেকে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিলুপ্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থাকায় প্রশাসনে চলছে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা। একই স্কেলে চাকরি করেও শ্রেণিভেদের কারণে প্রাপ্যতার বৈষম্য চলছে।
পাশাপাশি রয়েছে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বও। একই শ্রেণির সচিবালয়ে কর্মরতদের সঙ্গে বাইরের কর্মচারীদের রয়েছে বড় ধরনের বৈষম্য। চাকরিকাল গণনা নিয়ে রয়েছে হাজেরো মামলা-মোকদ্দমা। এসব কারণেই টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিলুপ্ত করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, জাতীয় বেতন স্কেল অনুমোদনের জন্য এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ওই সারসংক্ষেপের সঙ্গে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিলুপ্ত করার বেশ কিছু যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে আলাদা একটি প্রতিবেদনও পাঠানো হয়। মূলত ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বেতন ও চাকরি কমিশন ২০১৩ টাইমস্কেল/সিলেকশন গ্রেড/উচ্চতর স্কেল বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে। ২০০৪ সালের বেতন কমিশনও এ ধরনের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু তা আমলে না নেয়ায় নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। গণকর্মচারীদের মধ্যে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের প্রাপ্যতা নিয়ে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রকার বৈষম্যের। এতে একদিকে যেমন বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে বৈষম্য দেখা দিয়েছে, তেমনি একই ক্যাডারের মধ্যেও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কর্মচারীদের মধ্যে এ বৈষম্য আরও প্রকট বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু সময়ের ব্যবধানে চাকরিজীবীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসব সুবিধাপ্রাপ্ত হন না। এজন্য বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) সভা অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হয়। পাশাপশি সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীর এসিআর ও সন্তোষজনক চাকরি বিবেচনা করা হয়। প্রায়ই ডিপিসির বৈঠক সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হয় না। দীর্ঘসূত্রতাসহ বিভিন্ন কারণে এ নিয়ে অসন্তোষ থেকেই যায়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যদিও একই স্কেলে বেতন পান কিন্তু প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিজীবীর জন্য একই ধরনের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিধান বর্তমানে নেই। এ কারণে শ্রেণিভেদে প্রাপ্যতার অনেক বৈষম্য রয়েছে। আবার প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্যাডার, নন-ক্যাডার ও ব্লকপদধারীদের মধ্যেও অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ ধরনের সমস্যা অন্যান্য শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে বিদ্যমান বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।
সচিবালয় কর্মরত ও বাইরের কর্মচারীদের বৈষম্য নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যে সচিবালয়ে কর্মরতরা ৮, ১২ ও ১৫ বছরে টাইম স্কেলের পাশাপাশি ১০ বছরে একই সিলেকশন গ্রেড পেয়ে থাকেন। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তা না পাওয়ায় তীব্র অসন্তোষ রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদানে চাকরিকাল গণনা ও স্কেল সুবিধা নির্ধারণের বিষয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এ জটিলতাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের মামলা হচ্ছে। এসব মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না সহজে। চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এসব মামলার অধিকাংশের রায় সরকারের বিপক্ষে যায়।
টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড ও উচ্চতর স্কেলের কারণে বাজেট নির্ধারণও জটিল হয়ে পড়ে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। এছাড়াও প্রতিবেদনে পাঁচটি গ্রেডের টাইমস্কেল বিদ্যমান ও না থাকার তুলনামূলক পরিসংখ্যানের চিত্র তুলে ধরা হয়। তাতে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টাইম স্কেল না থাকায় সংশ্লিষ্টরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
## পে-স্কেলের সব খবর
## অবশেষে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেল নতুন পে-স্কেল
বিএ