দেশবাসী ঈদ করে, তারা ট্রেনের অপেক্ষা করে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২২ পিএম, ০৫ জুন ২০১৯

দেশবাসী আজ বুধবার (৫ জুন) উদুল ফিরত উদযাপন করছেন। কিন্তু অনেকে মানুষ এখনও তাদের গ্রামে থাকা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

বুধবার সকালে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মানুষ ট্রেনের জন্য এখানে ভিড় করেছেন। তাদের কয়েকজন জানান, ঈদের দিন সকালেই তারা ছুটি পেয়েছেন। কেউ কেউ আগে ছুটি পেলেও আপনজনকে ঢাকায় রেখে যাবেন না বলেই আজ রওনা দিয়েছেন।

train

বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঘোষণা করা হচ্ছে, ‘আজ ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে কোনো ট্রেন ছেড়ে যাবে না। আপনারা অযথাই স্টেশনে বসে থাকবেন না।’

রেলওয়ে স্টেশনে আসার পর ট্রেন না যাওয়ার বিষয়টি জানার পার অনেকে বাসের সন্ধানে ছুটেছেন। আবার অনেকে আজ ট্রেন নেই জানার পরও স্টেশনেই অবস্থান নিয়েছেন। ট্রেন আসলেই পরে তারা বাড়ি ফিরবেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ট্রেনের ঈদের দিন পার করে দেয়াদের বেশিরভাগই অতি দরিদ্র মানুষ।

train

ট্রেন ছাড়া বাড়ি যাওয়ার উপায় নেই মো. শামীমের। রাজধানীর একটি হোটেলে খাবার সরবরাহ করা শামীমের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর পুরান লঞ্চ ঘাটের ব্যাপারীপাড়ায়। বাড়িতে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সবাই মাশাল্লা আনন্দেই ঈদ করতাছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ সকালে ছুটি পাইছি। ট্রেনে গেলে ৩০ টাকায় যাইতে পারমু। বাসে গেলে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা খরচ অইব। তাই ট্রেনেই যাইতে অবই।’

train

বাসে করে তো চলে যেতে পারেন, এমন কথা উত্তরে শামীম কোনো জবাব দিলেন না। কাঁধে হাত দিয়ে একটু মুচকি হাসলেন। মাথা নাড়তে নাড়তে চলে গেলেন শামীম।

স্টেশনেই মাদরাসা পড়ুয়া মো. হৃদয় ও স্ত্রীকে নিয়ে বসেছিলেন আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, ‘ট্রেন ত দিনে আইব না। রাইতে আইবার পারে। রাইতে না আইলে সকালে ত আইব, তহনই যামু।’ আব্দুল খালেকের স্ত্রী জানালেন, তারা সঙ্গে করে খাবার নিয়ে এসেছেন।

train

খালেকের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন হৃদয় হঠাৎ বলে উঠল, ‘আব্বা টেকা আছে?’ খালেক বলেন, ‘ক্যারে?’ আম কেটে বিক্রি করা পাশের এক দোকানিকে দেখিয়ে হৃদয় বলে, ‘ওগুলা খামু।’ এরপর ১০ টাকার নোট বের করে দিলে হৃদয় তার ঈদের দিনে পছন্দের খাবার কিনে খায়।

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মো. আশরাফুলকে নিয়ে ঢাকায় মেয়ের বাড়িতে দুই-তিনেক আগে এসেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মো. বাসির। বুধবার সকালে মেয়ের বাড়ি থেকে গ্রামের উদ্দেশে ছেলেকে নিয়ে রওনা দেন তিনি। কিন্তু বিমানবন্দর স্টেশনে এসে দেখেন আজ কোনো ট্রেন যাবে না।

train

ছোট্ট আশরাফুলের জন্য কেনা কোয়েল পাখির ময়লা বৃষ্টির পানিতে পরিষ্কার করতে করতে বাসির বলেন, ‘২ ঘণ্টা ধইরা আইছি। ট্রেন নাই। গাজীপুরে পুলা থাহে। ওর অনুকা যামু গা।’ ঈদে বাড়িতে যেতে না পারলেও আশরাফুলের চোখেমুখে খুশির আভা। সে বলে, ‘কোয়েল কিনছি। পালমু।’

ভৈরবের মমতাজ বেগম আগে ছুটি পেলেও তার ছোটভাই আমিনুল ইসলামের ছুটি হয়েছে বুধবার সকালে। মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করা মমতাজ বেগম বলেন, ‘ঈদের একদিন আগেই আমি ছুটি পাইছি। ভাইয়ের জন্য যাই নাই। ছোট ভাই ত।’

train

আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘একটা হোটেলে কাজ করি। আজ সকাল থেকেই ছুটি পাইছি। ট্রেন যাবে না। এহন বাসে যাব।’

train

দুপুর পর্যন্ত বিমানবন্দর স্টেশনে অপেক্ষা করে দেখা যায় তখনও কিছু মানুষে ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনে বসে আছেন।

পিডি/এসএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।