পরিবহন ও সড়কে শৃঙ্খলা নেই : ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:২৮ পিএম, ০৩ জুন ২০১৯

পরিবহন ও সড়কে শৃঙ্খলা নেই উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পরিবহনেও শৃঙ্খলা নেই, সড়কেও শৃঙ্খলা নেই। আমাদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শৃঙ্খলা।’

সোমবার (৩ জুন) সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘এ দেশে সততার সাথে কাজ করা -এটা একটা চ্যালেঞ্জ। সত্য কথা আমরা খুব কম লোকই বলি। রাজনীতিতে সৎ মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নেই। আমরা সবাই সৎ হলে দেশের চেহারাটা বদলে যেত। আমাদের এখানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন আশাতিরিক্ত হয়েছে। কিন্তু ডিসিপ্লিনের অভাবে এর সুফল আমরা জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। এখানে শৃঙ্খলা হচ্ছে বড় সঙ্কট। পরিবহনেও শৃঙ্খলা নেই এবং সড়কেও শৃঙ্খলা নেই। আমাদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শৃঙ্খলা।’

মন্ত্রী বলেন, ‘শৃঙ্খলার সঙ্কট যদি আমরা কাটাতে পারি, তাহলে এ দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক স্বস্তি আসবে।’

সড়কের ঈদযাত্রার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ঈদযাত্রা এর আগে এত স্বস্তিদায়ক হয়নি। কোথাও থেকে বড় ধরনের যানজটের খবর পাইনি। আজকে একটু চাপ বাড়বে গার্মেন্টস ছুটির পর বিকেলে। বৃষ্টি-বাদল হলে যানবাহনের ধীর গতি হতে পারে। এমনটাই সবাই বিশ্বাস করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ৪ ঘণ্টায় যাচ্ছে। আমরা বহুদিন পর স্বস্তির জায়গায় এসেছি। এই স্বস্তিদায়ক যাত্রা আগামী দিনেও রাখতে চাই। শুধু ঈদ কেন, সারা বছরই রাস্তায় স্বস্তি থাকবে, এটাই জনগণ আশা করে।’

চিকিৎসকদের বারণ সত্ত্বেও দুটি বাস টার্মিনাল পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগ আছে। মালিকরা একটা বিষয় বলার চেষ্টা করেছে, আসার পথে তারা খালি আসে। আমি বলেছি, আপনারা ঈদের সময়টায় আয়ের বিষয়টি একটা সংযমের সাথে করবেন।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সব কথায় কাজ হয়? এমন হলে তো বাংলাদেশ এতদিনে সোনার বাংলা হয়ে যেতে। সব কথায়ও কাজ হয় না, আবার সব সত্য কথাও আমরা বলি না। এখানে বিপদে পড়ে জনগণ, অশান্তির কারণ তারা (জনগণ) সৃষ্টি করে না, আমরা প্রভাবশালীরাই সৃষ্টি করি।’

তিনি বলেন, ‘টোকিও শহরের রাস্তা আমাদের চেয়ে প্রশস্ত নয়। তারপরও সেখানে শৃঙ্খলা এমন যে দুর্ঘটনাও হয় না, যানজটও হয় না।’

‘আমাদের এখানে রাস্তায় যানজটের সঙ্গে জনজটও হয়ে যায়। ইদানিংকালে এই সমস্যা অত্যন্ত প্রকট কেউ নিয়ম মানে না। এখানে জলজট, জনজট ও যানজট- তিনটি মিলিমিশে একাকার। এটা ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের যানজট সমস্যাকে অসহনীয় করে তুলছে।’

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ঈদের পরই ডিটিসিএ’র (ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ) মিটিং করব, দুই সিটির মেয়রদের সঙ্গে বৈঠক করব। ঢাকায় বছরের পর বছর ট্রাফিক ব্যবস্থায় যে বিশৃঙ্খলা চলছে সেটার অবসানে আমাদের কিছু কাজ আছে। আমার নিজেরও কিছু আইডিয়া আছে। এ নিয়ে আমি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলব, কার্যকর কিছু করা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র লিপ সার্ভিস দিয়ে আমরা দিস্তার পর দিস্তা কাগজ আমরা লিখেছি। রিপোর্ট করেছি, তদন্ত কমিটি করেছি। কিন্তু সমস্যার সমাধান...যতটা রেজাল্ট আসার কথা সেই রেজাল্ট আসেনি। ....মানুষকে লিপ সার্ভিস দিয়ে আর কতকাল খুশি রাখা যাবে। মানুষ সত্যিকার অর্থে বাস্তব সমাধান চায়।’

মেট্রোরেলের মাধ্যমে ঢাকার যানজট সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-৬) পূর্ত কাজ আগামী বছরের মধ্যে শেষ হবে। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে মেট্রোরেল আমরা চালু করতে পারব।’

পাঁচটি মেট্রোরেলের কাজ ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হলে যানজট নিরসনে সার্বিক সামগ্রিক পদক্ষেপ হিসেবে সুফল বলেও জানান সেতুমন্ত্রী।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পটি এত দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে যে আমি যদি আগে বুঝতাম তবে এই প্রকল্পটির বিকল্প চিন্তা করতাম। বিআরটি প্রকল্পটি আমরা এখানে কতটা বাস্তবায়ন করতে পারব?’

ঈদের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে কি-না, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা আদালতের বিষয়। আদালত বন্দী করেছে, মুক্তি দিতে পারে আদালত।’

আপনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। একটি বইয়ে আপনি লিখেছেন সুযোগ পেলে আপনি রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবেন- এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গুণগত পরিবর্তন বলতে বুঝি আচরণগত পরিবর্তন। এখানে একটা পরিবর্তন দরকার। আমরা রাজনীতিবিদরা পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত শব্দবোমা নিক্ষেপ করি এটা পরিবেশটাকে নষ্ট করছে।’

‘আমি আমাদের পার্টি, আমাদের সরকার এবং বিরোধী দলের কাছে আহ্বান করতে চাই- আমরা এই বিষয়গুলো অন্তত রাজনীতিতে বিদ্বেষের ভাষাটা শব্দবোমা যে বিষয়টি, যে বিষয়টা পারস্পরিক সম্পর্ককে অবনতির দিকে নিয়ে যায় তা না করি। এখন একটা ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিং গণতন্ত্রে থাকা দরকার। এটা থাকলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বক্তৃতায় ভাষা যদি একটু নমনীয় করি, অন্তত সৌজন্যবোধরা রাজনীতিতে থাকে....। অন্য বিরোধী দলের কারো জানাজায় যাব না এটা হয় না। এসব বিষয়ে যদি পরিবর্তন আনতে পারি, তবে বড় ধরনের চেঞ্জ আমরা করতে পারব।’

রাজনীতিতে যাতে সামাজিক সম্পর্ক ও সৌজন্যবোধ বজায় থাকে সেই উদ্যোগ আগামীতে আওয়ামী লীগ নেবে বলেও জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক কাদের।

আরএমএম/আরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।