রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম : হাইকোর্ট


প্রকাশিত: ০৭:৩৭ এএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম -এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এ আদেশের ফলে সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম বহাল থাকার বিষয়টি বলবৎ থাকলো।

সোমবার রিট আবেদনকারী আইনজীবী সুমেন্দ্র নাথ গোস্বামী আদালতে নিজেই শুনানি করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোরশেদুল আলম। তাদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান। পরে খোরশেদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন।”

১৯৮৮ সালে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা এবং ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি ফিরিয়ে আনার পরও রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে গত অাগস্টে এই রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমেন্দ্র নাথ গোস্বামী। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার আদালতে খারিজের আদেশ দেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন চতুর্থ জাতীয় সংসদে অষ্টম সংশোধনী অনুমোদন হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর সঙ্গে ২ (ক) দফা যুক্ত হয়। এতে বলা হয়, “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।”

২০১১ সালের ২৫ জুন আনা পঞ্চদশ সংশোধনীতে ওই অনুচ্ছেদ আবারও সংশোধন করা হয়। সেখানে বলা হয়, “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে।”

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের পাশাপাশি ৭২ এর সংবিধানের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়।

রিট আবেদনকারীর যুক্তি ছিল, একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ২ (ক) অনুচ্ছেদটি সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদের পরিপন্থি যেখানে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ তথা সংবিধানের প্রাধান্যের বিষয়ে বলা হয়েছে।
 
আবেদনে বলা হয়, ওই অনুচ্ছেদটি সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সংক্রান্ত অষ্টম অনুচ্ছেদেরও পরিপন্থি, যেখানে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এবং এসব নীতি থেকে উদ্ভূত অন্য সব নীতিকে রাষ্ট্র পরিচালনার ‘মূল নীতি’ ঘোষণা করা হয়েছে।

২ (ক) অনুচ্ছেদটি ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সংক্রান্ত দ্বাদশ অনুচ্ছেদে ১২; উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতি-স্বত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত ২৩ (ক) এবং আইনের দৃষ্টিতে সমতা সংক্রান্ত সংবিধানের ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি বলেও অভিযোগ করেছিলেন সমেন্দ্র নাথ গোস্বামী।
 
আদালতের আদেশের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা  বলেন, “সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদসহ অন্যান্য অনুচ্ছেদ ২ (ক) এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। ২ (ক) তে একই অধিকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। দ্বাদশ বা অন্যান্য অনুচ্ছেদের সঙ্গেও তা সাংঘর্ষিক নয়। এ কারণে আদালত তা খারিজ করে দিয়েছেন।”


এফএইচ/আরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।