বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বিকৃতিতে জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন এ কে খন্দকার
‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের শেষে ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছেন উল্লেখ করায় জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন সাবেক মন্ত্রী এ কে খন্দকার। শনিবার (১ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এ কে খন্দকার বলেন, “আমার বইয়ে ‘জয় পাকিস্তান’ এই অংশটুকুর জন্য দেশপ্রেমিক অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন। এই অংশটুকু আমার বইতে যেভাবেই আসুক না কেন এ অসত্য তথ্যের দায়ভার আমার এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে কখনোই ‘জয় পাকিস্তান’ শব্দ দুটি বলেননি।”
তিনি বলেন, ‘তাই আমি আমার বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত বিশেষ অংশ সম্বলিত পুরো অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং একই সাথে জাতির কাছে ও বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।’
এ কে খন্দকার আরও বলেন, আমার লেখা বই ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে ‘প্রথমা প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত হয়।
এর আগে গত মাসে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এ বিষয়ে ক্ষমা চাইলেও এবার প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক এবং সাবেক মন্ত্রী এ কে খন্দকার (বীর উত্তম)।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ কে খন্দকার বলেন, ‘‘আমার লেখা বই ‘১৯৭১ ভেতরে বাইরে’ ২০১৪ সালের আগস্টে ‘প্রথমা প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশনার পর বইটির ৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখিত বিশেষ অংশ ও বইয়ের আরও কিছু অংশ নিয়ে সারাদেশে প্রতিবাদ ওঠে। বইটির ৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখিত বিশেষ অংশটি হলো- ‘বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণেই যে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল, তা আমি মনে করি না। এই ভাষণের শেষ শব্দগুলো ছিল ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’। তিনি যুদ্ধের ডাক দিয়ে বললেন, ‘জয় পাকিস্তান’।’’
তিনি বলেন, “এই অংশটুকুর জন্য দেশপ্রেমিক অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এই তথ্যটুকু যেভাবেই আমার বইতে আসুক না কেন, এই অসত্য তথ্যের দায়ভার আমার এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মাচের্র ভাষণে কখনোই ‘জয় পাকিস্তান’ শব্দ দুটি বলেননি। আমি তাই আমার বইয়ের ৩২ নম্বর পৃষ্ঠার উল্লেখিত বিশেষ অংশ সম্বলিত পুরো অনুচ্ছেদটুকু প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং একই সঙ্গে আমি জাতির কাছে ও বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।’’
শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে বিশ্বে খ্যাতির শীর্ষে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত। তারই বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে দেশ আজ যুদ্ধাপরাধীমুক্ত। জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে পরা একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার প্রতি কৃতজ্ঞ।
বক্তব্যের ইতি টেনে তিনি বলেন, আমার বয়স এখন ৯০ বছর। আমার সমগ্র জীবনে করা কোনো ভুলের মধ্যে এটিকেই আমি একটি বড় ভুল বলে মনে করি। গোধূলী বেলায় দাঁড়িয়ে পড়া সূর্যের মতো আমি আজ বিবেকের তাড়নায় দহন হয়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মার কাছে ও জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আশা করি, প্রথমা প্রকাশনী আমার বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠার বিতর্কিত অংশটুকু বাদ দিয়ে পুনঃমুদ্রণ করবেন। দেশপ্রেমিক সবার জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।
এফএইচ/আরএস/জেআইএম