বার্গেনিং না করলে তালতলায় ধরা
থরে থরে সাজানো থ্রি-পিস, শাড়ি। আছে বাচ্চাদের শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্টও। ঘুরতে ঘুরতে পছন্দ হয়ে গেলে কোনো একটি পোশাকের দাম জানতে চাইলেন। দোকানি যে দাম বলবেন যদি সেই দামে কিনে নেন তো নিশ্চিত ঠকলেন।
এ চিত্র রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অবস্থিত তালতলা সিটি কর্পোরেশন সুপার মার্কেটের। মার্কেটটির ব্যবসায়ীরা যে দামে পোশাক বিক্রি করেন সব সময় তার থেকে দ্বিগুণের বেশি দাম চান। কোনো কোনো ব্যবসায়ী তিনগুণ পর্যন্ত দাম চান। চলমান ঈদ বাজারেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
অস্বাভাবিক দাম চাওয়ার বিষয়ে মার্কেটটির ব্যবসায়ীরা বলেন, এখানে যারা পোশাক কিনতে আসে সবাই বার্গেনিং করেই কেনে। ৩০০ টাকার পোশাকের দাম যদি ৩০০ টাকায় চাওয়া হয়, তাহলে ক্রেতারা দেড়শ’ টাকা দাম বলে। এ জন্য প্রকৃত দামের থেকে বেশি দাম চাওয়া হয়।
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, মার্কেটের ব্যবসায়ীরা পোশাকের যে দাম চান তাতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। ৩০০ টাকার পোশাকের দাম কোনো কোনো ব্যবসায়ী হাজার টাকার উপরে চান। আর যে পোশাকের দাম হাজার টাকা চাওয়া হয়, একজন নতুন ক্রেতার পক্ষে তার দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার নিচে বলা সম্ভব না। ফলে এ মার্কেট সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই তারা পোশাক কিনে অনেক সময় ধরা খান।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন মার্কেটটিতে গিয়ে দেখা যায়, এক নারী একটি থ্রি-পিস দেখিয়ে ব্যবসায়ীর কাছে দাম জানতে চাইলেন। ব্যবসায়ী থ্রি-পিসটির দাম চাইলেন ১৬০০ টাকা। এরপর ওই নারী বললেন ৬০০ টাকায় দেবেন? উত্তরে ব্যবসায়ী বলেন, ঈদ বাজারে এতো বেশি দাম চাইনি। হাজার টাকার নিচে হবে না। আরও একটু বাড়াতে হবে। যদি আর একটু বাড়িয়ে নিতে পারেন নিয়ে যান।
এরপর ওই নারী বলেন, আর বাড়াতে পারব না। দিলে দেন, না দিলে গেলাম। তখন ওই ব্যবসায়ী বলেন, ৬০০ টাকায় পারব না। একদাম ৮০০ টাকা হলে নিয়ে যান। অন্য কোথাও এ থ্রি-পিস পাবেন না। তবে ব্যবসায়ীর এ কথায় মন গললো না ওই নারীর, তিনি অন্যদিকে রওনা হলেন।
এ সময় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বললে ওই নারী নিজেকে নিলুফা পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে ৭ বছর ধরে খিলগাঁওয়ে থাকি। প্রথম থেকেই আমি এ মার্কেটের এ চিত্র দেখছি। এ মার্কেট থেকে কোনো পণ্য কিনতে হলে ব্যবসায়ীরা যে দাম চাইবে প্রথম তার তিন ভাগের এক ভাগ দাম বলতে হবে। দেখবেন অনেক সময় ওই দামেই দিয়ে দেবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাম আর একটু বাড়াতে হয়। সে ক্ষেত্রে পোশাকের ধরন দেখলেই বোঝা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা বার্গেনিং করতে পারে না, তারা এ মার্কেটে পোশাক কিনতে আসলে নিশ্চিত ধরা খাবেন। বছর দুই আগে আমার পাশের বাসার আপার ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছিল। ওই আপা তার মেয়ের জন্য ১১০০ টাকা দিয়ে একটি থ্রি-পিস কিনেছিলেন। ব্যবসায়ী দাম চেয়ে ছিল ১৩০০ টাকা। পরে একই থ্রি-পিস একই দোকান থেকে আমার সঙ্গে এসে ৫০০ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন।’
অতিরিক্ত দাম চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মার্কেটটির ব্যবসায়ী জহিরুল বলেন, ‘আমাদের এখানে যারা আসে সবাই বার্গেনিং করে কেনে। যে দামই চাওয়া হোক, ক্রেতারা দাম বলে তার অর্ধেকের কম। ক্রেতাদের এমন আচরণের কারণে আমরাও দাম বাড়িয়ে চাই। ক্রেতারা যদি এক দামে কিনতো তাহলে আমরা এমন দাম বাড়িয়ে চাইতাম না।’
তিনি বলেন, ‘এখানে সাধারণতো নিম্ন আয়ের মানুয়েরা বেশি আসেন। তাদের রুচি ও পছন্দের ওপর নির্ভর করে আমরা পোশাক আনি। এক দোকানের পোশাকের দামের সঙ্গে অন্য দোকানের দামের খুব একটা পার্থক্য নেই।’
মার্কেটটির আরেক ব্যবসায়ী হামিদ আলী বলেন, ‘বার্গেনিং করে পোশাক বিক্রি করাই এখানে প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যত দামই চাই না কেন, ক্রেতা দাম কমিয়ে যে দামে বিক্রি করব সেখানে নিয়ে যায়। খুব কম ক্রেতা আসে যারা দাম খুব একটা কমায় না।’
ঈদ কেন্দ্রিক বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এবার ঈদ উপলক্ষে বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে ১৫ রোজার পর থেকে বিক্রি জমেছে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের উপস্থিতি মার্কেট বেশ জমজমাট থাকে।’
এমএএস/এনডিএস/এমএস