ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি নতুন গয়নায়
যে কোনো উৎসবে বাঙালির পছন্দ স্বর্ণের গয়না। মাত্র কয়েক দিন পরই ঈদ। তাই রাজধানীর বিপণি বিতানগুলোতে চলছে উপচেপড়া ভিড়। পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে নারীরা ছুটছেন গয়নার দোকানে। নতুন ডিজাইনের গয়নায় ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের নিচ তলায় দেশের স্বর্ণের গয়নার অন্যতম বৃহৎ মার্কেট। নামিদামি সব ব্র্যান্ডের জুয়েলারি দোকান রয়েছে এখানে। ঈদ উপলক্ষে শো-রুমগুলোতে বিভিন্ন ডিজাইনের গহনাসহ স্বর্ণের চুড়ি, কানের দুল, চেইন, আংটিসহ বাহারি সব স্বর্ণালংকার সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
ঈদের দুদিন পরই বিয়ে প্রবাসী বেলাল হোসেনের। তাই নববধূর জন্য গয়না ও স্বর্ণালংকার কিনতে তিনি বায়তুল মোকাররম এসেছেন। সঙ্গে থাকা তার বোন জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের পরই ভাইয়ার বিয়ে। কনের বাড়ি থেকে হীরার আংটি আবদার করেছে। দেখছি, দাম পছন্দ হলে কিনব। এছাড়া গয়না কিনব। কিন্তু দাম অনেক। নতুন ডিজাইন যেটি পছন্দ হয় সেটি বাজেটে হচ্ছে না। ঘুরে দেখছি। স্বর্ণ অনেক টাকার বিষয়, তাই ব্র্যান্ডের ছাড়া কিনবেন না বলে জানান তিনি।
এদিকে শারমিন জুয়েলার্সের বিক্রয় ব্যবস্থাপক রাসেল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে বেচাকেনা ভালোই চলছে। নতুন নতুন ডিজাইনের গহনায় ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। কেউ কেউ আগের ডিজাইন পরিবর্তন করতেও আসছে। তবে এর সংখ্যা খুবই কম বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন> ঈদ আনন্দ নেই, আছে শুধু উদ্বেগ
আমিন জুয়েলার্সের বায়তুল মোকাররম মার্কেটের শো-রুম ম্যানেজার জিল্লুর বলেন, বিক্রি হচ্ছে তবে তেমন নয়। গত বছরের চেয়ে এবারের স্বর্ণের ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। এখন আগের মতো গয়নার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। আগে উৎসবে স্বর্ণ কেনাবেচা হতো। এর সংখ্যা এখন অনেক কমে গেছে।
দেশের স্বর্ণের নীতিমালাটা বাস্তবায়ন হলে ব্যবসার ধরন কিছুটা পরিবর্তন হবে। তখন ব্যবসাও কিছুটা বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন এ ব্যবসায়ী। একই সুরে আপন জুয়েলার্সের শো-রুম ম্যানেজার বলেন, ব্যবসা অনেকটা গতানুগতিক। বছর যাচ্ছে ব্যবসা কমে যাচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবারে ব্যবসা খুবই খারাপ।
আমিন জুয়েলার্স শো-রুমে গয়না ও আংটি কিনতে আসেন গৃহবধূ সঙ্গিতা। তিনি বলেন, শ্বশুরবাড়ি থেকে বিয়েতে একটি স্বর্ণের নাকফুল দিয়েছিল। এতোদিন সেটা পরেছিলাম। এখন ঈদের জন্য ছোট ডায়মন্ডের একটা নাকফুল কিনলাম। সঙ্গে আমার স্বামী একটি আংটি উপহার দিল।
আলভী জুয়েলার্সের বিক্রয় কর্মকর্তা সূর্য জাগো নিউজকে বলেন, ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। মানুষ স্বর্ণের গয়না বেশি কেনে বিয়ের সময়। সাধারণত দেশে ঈদের পর বিয়ে অনুষ্ঠান বেশি হয়। তাই ঈদের আগে বেশি হয় স্বর্ণের ব্যবসা। কিন্তু এ বছর তেমন কোনো ব্যবসা নেই। ঈদ উপলক্ষে গহনা, রিংসহ নতুন নতুন ডিজাইনের আইটেম এনেছি। কিন্তু কাস্টমার নেই। সারাদিনে দু-একটা কাস্টমার আসে।
ব্যবসা কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, মানুষের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। স্বর্ণ বিলাসী পণ্য। সব খরচ মিটিয়ে বাড়তি টাকা থাকলে স্বর্ণ কেনে। ঈদের আরও চার-পাঁচদিন আছে। তারপরও আশা করছি, ব্যবসা ভালো।
এদিকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সর্বশেষ ২৯ জানুয়ারি নির্ধারণ করা দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৫০ হাজার ১৫৫ টাকা। ২১ ক্যারেট ৪৭ হাজার ৮২২ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ৪২ হাজার ৮০৭ টাকা। আর প্রতিভরি সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ২৭ হাজার ৫৮৫ টাকা। প্রতি ভরি ২১ ক্যারেট রুপা (ক্যাডমিয়াম) দাম এক হাজার ৫০ টাকা।
এসআই/এমএসএইচ/এমএস