সালমান নেই, আমাদের গল্পও নেই
অমর নায়ক সালমান শাহ! দীর্ঘশ্বাসের প্রতিশব্দ হয়ে গেছে একটা নাম। স্টাইলে, ফ্যাশানে অতটা পারফেক্ট, অতটা সাবলীল আর কোনও আইকন বাংলায় কখনোই আসেনি, আসার কোনও লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না! তখনকার তরুণদের ঘরের দেয়ালে সালমানের পোস্টার ঝুলতো, মানিব্যাগে কার্ড-ক্যালেণ্ডার থাকতো সালমানের।
আজকের এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এই প্রজন্মের আমরা উপলব্দি করি, সালমানের মতো নিখুঁত, সাবলীল একজন স্টাইল আইকন তখন খুব দরকারি ছিলো, অন্তত পশ্চিমা আইকনিজমের কাউন্টার দেয়ার জন্য। সালমান সেটা হয়েও উঠছিলেন।
চলচ্চিত্রে তখনো প্রতিবাদ ছিলো, উঠে আসতো সমাজের বাস্তবতা। প্রতিবাদের কথা, তারুণ্যের সম্ভাবনার কথা- চলচ্চিত্র বলে যাচ্ছিলো। সালমান সেই বলঅর আন্দোলনের নায়ক ছিলেন। সব শ্রেণীর, সব পেশার, সব মতের মানুষদের এক অবিসংবিদিত নায়ক হয়ে এসেছিলেন সালমান। কোনও শ্রেণীর গণ্ডিতে তাকে আটকানো যায়নি।
সালমানের মৃত্যু আর বাংলা ফিল্ম ইণ্ডাস্ট্রির জৌলুসের মৃত্যু একই দিনে হয়েছে। এখনকার ফিল্ম ইণ্ডাস্ট্রি কোন জীবিত সত্তা বলে মনে হয় না। একটা গলে যাওয়া মৃতদেহের মতো; আমরা সবাই বয়ে চলেছি। এই মৃতদেহ যতটা বিবর্ণ, তার চাইতে বহুগুণ উজ্জ্বল এখনও আমাদের সালমান।
যে চলচ্চিত্র শিল্প ছিলো কোটি মানুষের বিনোদনের ভাণ্ডার, আজ সেই ভাণ্ডারে খাঁ খাঁ করা শূন্যতা। সেই সুযোগে ভারতের ছবি, ভারতের সিরিয়াল দখল করে ফেলেছে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, চলচ্চিত্রকে। মানুষের মনুষত্তে ভাইরাসের মত অপসংস্কৃতি ঢুঁকিয়ে দেয়া যাচ্ছে। এটা সম্ভব হচ্ছে কেবলমাত্র শূন্যতার কারণেই। আমাদের কিছুই নেই এখন, সত্যি বলতে কিছুই নেই। নিজের বলতে কিছু নেই। আমরা গল্প করি সারাদিন হলিউড নিয়ে, বলিউড নিয়ে। সালমানের পর এসে আমাদের গল্প করবারও কিছু নেই।
কলকাতার ফিল্ম দুই স্তরে দখল করে ফেলেছে আমাদের সামাজিক মনস্ত্বত্ত্ব। শিক্ষিত বাঙলাদেশি কলকাতার আর্ট ফিল্ম দেখে, অর্ধশিক্ষিত বাঙালি কলকাতার বাজারি ছবি দেখে! নিজেদের কিছুই নেই! চলচ্চিত্রে আমরা একটা লুজার দর্শক হয়ে আছি। যাদের নিজস্ব ফিল্ম নেই, ফিল্মের কোনো আইকন নেই। আজকাল আমাদের দেশের নায়িকারা বড় গলায় বলে বেড়ায় ভিনদেশি নায়কের সাথে ছবি করার ইচ্ছের কথা। মনে খোঁচা লাগে। ভাবি, অস্থিত্ব কোথায় গিয়ে ঠেকেছে?
সেইসাথে ভাবনায় আসে সালমান। তিনি বেঁচে থাকলে এই মাধ্যমটা আরো বর্ণিল হতে পারত, সাফল্যের হতে পারত। আমাদেরও গল্প থাকতো, আমাদেরও নায়ক থাকতো। অমীমাংসিত এক মৃত্যু ঢাকাই ছবির নক্ষত্রকে কেড়ে নিয়ে গেল। তারপর থেকেই খরায় আমরা। ভীষণ খরায়। কে জানে কবে নামবে নতুন মৌসুমের বৃষ্টি।
১৯তম প্রয়াণ দিবসে প্রিয় নায়ককে স্মরণ করছি বিনম্র শ্রদ্ধায়। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন আমাদের সালমান শাহ।
এনই/এলএ