কেমিক্যালই বাড়িয়েছে চুড়িহাট্টার আগুন

জসীম উদ্দীন
জসীম উদ্দীন জসীম উদ্দীন , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১৭ পিএম, ২৬ মে ২০১৯

রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটেছিল হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলা থেকে। একাধিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। যদিও অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।

তবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) রাসায়নিক পরীক্ষায় স্পষ্ট হয়েছে যে, কেমিক্যালই বাড়িয়েছিল ওয়াহেদ ম্যানশনের আগুনের ভয়াবহতা।

আরও পড়ুন : চকবাজারে আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭০

সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষাগার কর্মকর্তারা বলছেন, চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত যেভাবেই হোক না কেন, আগুনের ভয়াবহতা বাড়িয়েছে কেমিক্যাল। হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনে জব্দ করা কেমিক্যাল আলামত পরীক্ষার পর সেখানে কেমিক্যালের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। ইথাইল অ্যালকোহল, বিউটক্সিইথানল, বিউটেন, আইসোবিউটেন, ইথার কেমিক্যালের উপস্থিতি মিলেছে রাসায়নিক পরীক্ষা, যা নিজে জ্বলে এবং অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে। যে কারণে আগুনের ভয়াবহতা বেড়েছে। বাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যাও।

Chalkbazar

আরও পড়ুন : মামা, মাকে কিন্তু আজ নিয়েই যাব

চকবাজার থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেলে রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল করে সিআইডি। রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন ও কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগার কর্মকর্তারা জানান, দেশব্যাপী আলোচিত ওই অগ্নি দুর্ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য চকবাজার থানায় মামলা হয়। বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) রাসায়নিক পরীক্ষাগারে ক্রাইমসিনে সংগৃহীত বিভিন্ন নমুনা আদালতের ক্ষমতাপত্র ও আদেশনামাসহ গত ১৮ মার্চ সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন : একসঙ্গেই পুড়েছিল দুই বান্ধবী, এবার দোলার মরদেহ শনাক্ত

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান পরীক্ষক ড. দিলীপ কুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকনির্দেশনায় মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে নমুনাসমূহে প্রাপ্ত রাসায়নিক পদার্থের প্রতিবেদন দেয়া হয়।’

Chalkbazar

তিনি বলেন, চুরিহাট্টার আগুনের ঘটনায় ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। রাসায়নিক পরীক্ষক পিংকু পোদ্দার অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী সম্ভাব্য সবধরনের নমুনা সংগ্রহ করেন এবং আদালতের মাধ্যমে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠান। আলামত পরীক্ষার জন্য তিন সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের সদস্যরা হলেন- রাসায়নিক পরীক্ষক নজরুল ইসলাম এবং দুই সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক মজিবুর রহমান শরীফ ও বদরুন্নেসা।

আরও পড়ুন : ধ্বংসস্তূপের সামনে কালো পতাকা হাতে ছোট্ট শিশু জারা

পরীক্ষার নমুনা বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়। সেসব হচ্ছে- ইথাইল অ্যালকোহল, বিউটক্সিইথানল, বিউটেন, আইসোবিউটেন, ইথার জাতীয় কেমিক্যালের উপস্থিতি। এগুলো নিজে জ্বলে এবং অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে।

Chalkbazar

সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান পরীক্ষক ড. দিলীপ আরও বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা সম্পন্ন করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। এখন তদন্তসংশ্লিষ্টরা তা আদালতে উপস্থাপন করবেন।’

আরও পড়ুন : মেয়র এক, মন্ত্রী বললেন ছয় মাস

গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আগুনে পাঁচটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা তৈরি হয় ওয়াহেদ ম্যানশনে। ওই ভবনের দোতলার পুরোটা প্লাস্টিক সামগ্রী ও প্রসাধনীর গুদাম ছিল। বেজমেন্টে ছিল বিপুল পরিমাণ রাসায়নিকের মজুত।

Chalkbazar

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যে ৭১ জনের মৃত্যু হয়, তাদের মধ্যে ২৪টি মরদেহ পাওয়া যায় ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলার সিঁড়ি ঘরে। আগুনের ভয়াবহতা সবাইকে নয় বছর আগের নিমতলীর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। ওই সময় রাসায়নিকের গুদামে লাগা আগুনে পুড়ে অঙ্গার হন শতাধিক ব্যক্তি।

আরও পড়ুন : কেমিক্যাল না এলপিজি, ব্লেইম গেম বন্ধ করে প্রতিকার খুঁজতে হবে

চুড়িহাট্টা দুর্ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করে। মন্ত্রণালয়ের দাখিল করা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, দোতলায় হাইলি ফ্লেমেবল (অত্যন্ত অগ্নিদাহ্য) পদার্থ ছিল। সেখানকার বিস্ফোরণেই আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তেই আগুন ৩-৪টি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গাড়িগুলোর সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে।

Chalkbazar

ওই ঘটনায় গঠিত কয়েকটি তদন্ত কমিটি এর আগে বলেছিল, দুটি গাড়ির সংঘর্ষের ফলে একটি গাড়ির সিলিন্ডারের বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত। খোদ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাইদ খোকনও বলেছিলেন, আগুনের সূত্রপাত গাড়ির সিলিন্ডার থেকে।

আরও পড়ুন : ‘বাবার জন্য রক্ত দিয়েছে, মাকে দিচ্ছে সান্ত্বনা’

এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনাস্থলে দুই গাড়ির মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। সড়কে যানবাহনের প্রেসার (বাড়তি চাপ) থাকায় গাড়িগুলো (প্রাইভেটকার, পিকআপ, মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি) অত্যন্ত ধীরগতিতে চলাচল করছিল। আগুন লাগার কয়েক মিনিট পর একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। পরবর্তীতে কয়েকটি সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে।

জেইউ/এনডিএস/এমএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।