লাখো মুসল্লির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে জাতীয় ঈদগাহ

মুহাম্মদ ফজলুল হক
মুহাম্মদ ফজলুল হক মুহাম্মদ ফজলুল হক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১৮ পিএম, ২৬ মে ২০১৯

পবিত্র রমজান শেষে প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে চলছে সৌন্দর্যবর্ধন ও সাজসজ্জার কাজ। যেখানে প্রতিবারের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, মন্ত্রী, বিদেশি কূটনৈতিক, সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ সাধারণ মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও ঈদুল ফিতরে লাখো মুসল্লি জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে চলছে পূর্ণ প্রস্তুতি।

রমজানের ১০ তারিখ থেকে ২শ’ মণ রশি আর ৩০ হাজার বাঁশ দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ৫০ জন শ্রমিক। পুরো ময়দানে ত্রিপল টাঙানো হবে। সংস্কার শেষে ঈদের নামাজের জন্য চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করা হবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন এ ময়দানকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় এখানেই ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

eid

সরেজমিনে ঈদগাহ প্রাঙ্গণে দেখা যায়, শ্রমিকরা বাঁশ দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করছেন। একই সঙ্গে চলছে গেটের মেরামত ও সামনের (মেহরাব) মিনারের কাজ। বাঁশের তৈরি অবকাঠামোর কাজ মাঠের উত্তর ও পূর্বকোণ থেকে শুরু করা হয়েছে। এই অবকাঠামো তৈরির পরই টাঙানো হবে বৃষ্টি নিরোধক ত্রিপল (ছামিয়ানা)। এরপর করা হবে লাইট, ফ্যান ও নিরাপত্তার জন্য ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোসহ সাজসজ্জার কাজ।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের ঘাস কাটার সঙ্গে বিভিন্ন স্থানের উঁচু নিচু মাটি কেটে সমান করছেন শ্রমিকরা। গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে মাটি সমান এবং গাছে রঙ করার কাজ করা হচ্ছে বলে জানান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ।

প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিয়ারু সরদার অ্যান্ড সন্সের কয়েকজন প্রতিনিধি। মূলত ঈদগাহের প্যান্ডেল তৈরি, সামিয়ানা ও ত্রিপল টাঙানো এবং ঈদগাহ ময়দান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজটি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রখর রোধ আর প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে শ্রমিকরা মেরামত ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছেন। পটুয়াখালীর ৬০ বছর বয়সী মো. আব্দুল রহিম কাজ করছেন ঈদগাহ ময়দানে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ১০ রমজান থেকে ৫০ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত মাঠজুড়ে বাঁশের খুঁটি পোতা হয়েছে। এরপর ত্রিপল টাঙানো হবে। পরে ফ্যান ও বাতি এবং নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হবে।

eid

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানকে ঘিরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ করছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের অজুখানা ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, জাতীয় ঈদগাহের প্রস্তুতি এবং দেশের প্রধান জামাত বিষয়ে আজ রোববার (২৬ মে) নগর ভবনে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাতীয় ঈদগাহ এবং প্রধান জামাতের প্রস্তুতিসহ বেশকিছু বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মুসল্লিদের ঈদের জামাত নির্বিঘ্ন করতে মাঠ সজ্জার কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এখন চলছে প্রাথমিক পর্যায়ের কাঠামো নির্মাণকাজ। ২৭ রমজানের মধ্যে বৃষ্টি নিরোধক ত্রিপল টাঙানোর কাজ করা হবে। এরপর সাজসজ্জা ও ভিআইপিদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

এসএসএফের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রতিবারের মতো এবারও ঈদগাহের নিরাপত্তায় পুলিশের সোয়াত টিম নিয়োজিত থাকবে। সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও আলাদা ক্যামেরা ও কন্ট্রোল রুম স্থাপন করবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নিরাপত্তা দেবে র‌্যাবের বোম ডিসপোজাল ইউনিট এবং ডগ স্কোয়াড। ঈদগাহের চারপাশে সাদা পোশাকের গোয়েন্দারাও থাকবেন।

eid

নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ আরও বলেন, ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহ প্রস্তুত করা এবং নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ার কাজ বিভিন্ন সংস্থা মিলে করে। আমরা সিটি কর্পোরেশন শুধু প্যান্ডেল তৈরি, সামিয়ানা ও রেইন প্রুফ কাভার অর্থাৎ ত্রিপল, মোবাইল টয়লেট স্থাপন এবং ঈদগাহের ভেতরে ও বাইরে সার্বিক সৌন্দর্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করি।

নিরাপত্তার কাজ করবে পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, মাইকিংয়ের কাজ করবে তথ্য মন্ত্রণালয়- এভাবে প্রস্তুত করা হয় ঈদগাহ ময়দান। আবার আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে তাহলে ঈদের জামাত আমাদের তত্ত্বাবধানেই হবে। সাধারণত ঈদের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে জামাতের বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে চলে যায়।

তিনি বলেন, ৯০ হাজার থেকে এক লাখ মুসল্লির জন্য নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রায় পাঁচ হাজার নারী মুসল্লির জন্য আলাদাভাবে নামাজ আদায়ের বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। অজুর পানি ছাড়াও খাওয়ার পানির জন্য ওয়াসাকে বলা হয়েছে। এছাড়া কাকরাইল, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, দোয়েল চত্বর ও এর আশপাশের র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকবে।

এফএইচ/আরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।