অ্যাপে ব্যর্থ হয়ে কমলাপুরে লাইনে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:২৩ এএম, ২৩ মে ২০১৯

কেউ লাইনে দাঁড়িয়েছেন মধ্যরাতে, কেউবা ভোরে। যে যেই লাইনে দাঁড়িয়েছে তার প্রতিটি এঁকেবেঁকে চলে গেছে পিছনের দিকে। এটি কমলাপুর স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের সামনের দৃশ্য। প্রতি বছরের মতো ঈদের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করতে কমলাপুরে টিকিট প্রত্যাশী মানুষের স্রোত।

বুধবার (২২ মে) সকাল ৯টা থেকে কমলাপুরে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে গতকালের তুলনায় আজ (বৃহস্পতিবার) টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড় বেড়েছে। তারা বলছেন, মূলত অ্যাপে কাঙ্ক্ষিত টিকিট না পাওয়ায় কাউন্টারে এসে সবাই লাইনে দাঁড়িয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ ১ জুনের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। যারা ২৪ মে টিকিট সংগ্রহ করবেন তারা পাবেন ২ জুনের টিকিট। যারা ২৫ মে সংগ্রহ করবেন তারা ৩ জুন, যারা ২৬ মে সংগ্রহ করবেন তারা পাবেন ৪ জুনের টিকিট। যাত্রীদের সুবিধার্থে এবার পাঁচটি স্থান থেকে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। শুধুমাত্র যমুনা সেতু দিয়ে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে কমলাপুরে।

আগামী ১ জুনের টিকিটের জন্য কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী তোফাজ্জল হোসেন। আলাপকালে তিনি বলেন, রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ট্রেনের জন্য সেহেরি খেয়ে ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আসলে আমার টিকিট দরকার ছিল ৩১ মের। সেই টিকিট বিক্রি হয়েছে গতকাল, আমি গতকাল লাইনে না দাঁড়িয়ে নতুন রেলসেবা অ্যাপের মাধ্যেমে দিনভর চেষ্টা করেছি। কিন্তু অ্যাপে কাজ না করায় টিকিট কাটতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে আজ এসে ১ জুনের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমার মতো অনেকেরই ধারণা ছিল যেহেতু এ বছর রেলসেবা অ্যাপ চালু হয়েছে, তাই আর লাইনে দাঁড়াতে হবে না। কিন্তু ফের এসে আমাদের লাইনে দাঁড়িয়ে সেই ভোগান্তি নিয়েই টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অ্যাপ কাজ না করায় কমলাপুরে টিকিট প্রত্যাশীদের লাইন আরও দীর্ঘ হয়েছে।

ঢাকা থেকে রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট প্রত্যাশী লাইনে দাঁড়ানো আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ভোরে লাইনে দাঁড়িয়েছি ঠিকই, কিন্তু সকাল ৯টায় টিকিট বিক্রি শুরু পর থেকে অ্যাপেও চেষ্টা করছি। অ্যাপ শুধু ঘোরে, মাথা নষ্ট অ্যাপের। এতো ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অ্যাপ সেবা চালু করা হয়েছে শুধু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য। আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীরা ভেবেছিল, তাদের এমন ভোগান্তি নিয়ে আর লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে না। কিন্তু অ্যাপের কোনো সেবাই গ্রহণ করতে পারল না আমাদের মতো যাত্রীরা। অ্যাপ কাজ করছে না জেনেই সবাই এসে কমলাপুরে ভিড় করছে।

প্রথম থেকেই অ্যাপ বিষয়ে যাত্রীদের অভিজ্ঞতা সুখের নয়। অ্যাপসটি সঠিকভাবে কাজ করছে না জানিয়ে প্রথম থেকেই অভিযোগ জানিয়ে আসছে তারা। ঈদ উপলক্ষে টিকিট বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শনে বুধবার কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী বলেন, অ্যাপে টিকিট পেতে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তির অভিযোগ আমরা পেয়েছি। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব, পাশাপাশি অ্যাপের মাধ্যেমে যে সব টিকিট বিক্রি হবে না, আমরা পরবর্তিতে তা কাউন্টার থেকে বিক্রি করব।

komolapur

রেলসেবা অ্যাপের মাধ্যমে যদি টিকিট কাটতে যাত্রীরা ব্যর্থ হয় তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, রেল সেবা অ্যাপ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএস যদি তার কাঙ্ক্ষিত সার্ভিস না দিতে পারে, সেটা তাদের যেমন ব্যর্থতা, তা আমাদেরও ব্যর্থতা।

অন্যদিকে কেন মানুষ অনলানাইনে টিকিট পাচ্ছে না, তা পরিদর্শনে কমলাপুরের সার্ভার রুমসহ অন্যান্য স্থান বুধবার পরিদর্শন করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) টিম।

রেলভবন সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে ঈদের সময় একসঙ্গে প্রায় দেড় লাখ হিট পড়ে। তবে সিএনএসবিডির যে সক্ষমতা তাতে মাত্র ২০ হাজার লোড নিতে পারে। যে কারণে সাধারণ মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট পেতে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছে।

রেলের অনলাইন টিকিট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস লিমিটেড বাংলাদেশ (সিএনএসবিডি) সূত্রে জানা গেছে, এবার ৫০ ভাগ টিকিট অনলাইনে তিন পদ্ধতিতে দেয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোনের এসএমএসে, ওয়েবসাইট থেকে এবং রেলের টিকিট কাটার সবশেষ ফিচার অ্যাপের মাধ্যমে। ঢাকা থেকে সবগুলো আন্তঃনগর ট্রেন মিলিয়ে দিনে প্রায় ৩০ হাজার ট্রেনের টিকিট রয়েছে। এর মধ্যে ৫ ভাগ রেলওয়ে কমকর্তা কর্মচারী ও ৫ ভাগ ভিআইপি ছাড়া বাকি সব টিকিটের ৫০ শতাংশ অনলাইন ও এসএমএস ও অ্যাপে পাওয়ার কথা। অতিরিক্ত যাত্রী চাপের কারণে সঠিক সেবাটা দেয়া যাচ্ছে না।

এসি টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ

কমলাপুর স্টেশনে গত রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেসের ট্রেনের এসি টিকিট পাননি রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, শুধু আমি নয় আমার মতো অনেক যাত্রীই গত রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও এসির টিকিট পাচ্ছি না। কাউন্টারে এসি টিকিট চাইলে বলা হচ্ছে এসি টিকিট শেষ।

রবিউল ইসলাম ছাড়াও গতরাত থেকে লাইনে দাঁড়ানো বেশিরভাগ টিকিট প্রত্যাশীরাই বলছেন, একজন মানুষ ১২/১৪ ঘন্টা শত ভোগান্তি নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও এসি টিকিট পায় না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে এসি টিকিট শেষ।

এ বিষয়ে স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, ঈদের সময় সবাই এসি টিকিট চায়। কিন্তু আমাদের এসি সিট তো সীমিত তাই সবাইকে দেয়া সম্ভব হয় না। প্রতিটি লাইনে মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। এছাড়া ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী তৎপর রয়েছেন।

যাত্রীদের সুবিধার্থে এবার পাঁচটি স্থান থেকে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। যমুনা সেতু দিয়ে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে কমলাপুরে। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে বিমানবন্দর স্টেশনে। ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট অগ্রিম সংগ্রহ করা যাবে তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে। নেত্রকোণাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা যাবে বনানী স্টেশন থেকে। এছাড়া সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে হবে ফুলবাড়িয়া (পুরনো রেলভবন) থেকে।

একজন যাত্রী চারটির বেশি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন না। ঈদের অগ্রিম বিক্রিত টিকিট ফেরত নেয়া হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। যাত্রীরা ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে অ্যাপের মাধ্যমে কিনতে পারবেন। স্টেশন কাউন্টার থেকে কিনতে পারবেন ৫০ শতাংশ টিকিট অগ্রিম। অনলাইনে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি না হলে অবিক্রিত টিকিট কাউন্টার থেকে দেয়া হবে।এদিকে রেলের ফিরতি টিকিট বিক্রি ২৯ মে শুরু হয়ে ২ জুন পর্যন্ত চলবে।

এএস/এমএসএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।