জ্বালানি শেষ হয়ে দু’দিন সাগরে ভাসে নৌকাটি

জেসমিন পাপড়ি
জেসমিন পাপড়ি জেসমিন পাপড়ি , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:০০ পিএম, ২২ মে ২০১৯
ফাইল ছবি

লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার উপকূলবর্তী ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবির ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া ১৪ বাংলাদেশি এখনো রেড ক্রিসেন্টের আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন। যে ১৫ জন দেশে ফিরেছেন তারা নৌকাডুবির কবলে পড়েননি, জ্বালানি শেষ হওয়ায় ভূমধ্যসাগরে দু’দিন ধরে সাগরে ভাসছিল তাদের নৌকা।

সমুদ্রপথে অবৈধভাবে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার সময়ে গত ১০ মে (শুক্রবার) ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় ৩৯ বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন। ওই ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ১৪ বাংলাদেশি এখনো তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্টের আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন। তবে সেদিন একই সময়ে ভূমধ্যসাগরে আরও একটি নৌকা ভাসছিল। সেটিতেও ১৫ জন বাংলাদেশিসহ ৫৭ জন অভিবাসন প্রত্যাশী লিবিয়া থেকে ইতালি যেতে চেয়েছিলেন।

নৌকাটি ইতালি পৌঁছাতে পারেনি। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই তিউনিশয়ার উপকূলে পৌঁছায়। পড়ে জ্বালানি শেষ হওয়ায় দু’দিন সাগরে ভাসার পর ১১ মে (শনিবার) তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করেন। ওই নৌকা থেকে উদ্ধার হওয়া ১৫ বাংলাদেশিকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহায়তায় গতকাল মঙ্গলবার (২১ মে) দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সংবাদ মাধ্যমে এই দলটিকে সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে উদ্ধার হওয়া যাত্রী বলে প্রচার করা হলেও লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জাগো নিউজকে জানায়, গত ১০ মে (শুক্রবার) ডুবে যাওয়া নৌকায় থাকা ১৪ জন জীবিত বাংলাদেশি এখনো তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্টের আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন। ওই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এই দলটির (দেশে ফেরা ১৫ জন) খোঁজ পাওয়া যায়।

দেশে ফেরা ১৫ জনের নৌকাটি নৌকার জ্বালানি শেষ হওয়ায় গত ৯ মে (বৃহস্পতিবার) থেকে মাঝ সাগরে ভাসছিল। পরে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড ১১ মে (শনিবার) তাদের উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ১০ মে (শুক্রবার) নৌকাডুবির কবলে পড়া নৌকাটির মতো লিবিয়া থেকে যাত্রা শুরু করেছিল এই নৌকাটিও। তবে নৌকাটির জ্বালানি শেষ হওয়ায় সাগরের মাঝে ভাসতে থাকেন তারা। ৯ মে থেকে তারা সাগরে ভাসছিলেন। পরে ১১ মে তিউনিশিয়ার কোস্ট গার্ড তাদেরকে উদ্ধার করে।

তিনি আরও জানান, উদ্ধারের সময় নৌকায় থাকা ৫৭ জনের সবাই সুস্থ ছিলেন। তিউনিশিয়া অথরিটি তাদেরকে কোনো শেল্টারেও নেওয়ার সুযোগ দেয়নি। উদ্ধারের পরপরই তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাকে চাপ দিতে থাকে। এ জন্যই তাদেরকে আইওএমের মাধ্যমে দেশে পাঠানো হয়েছে।

দূতাবাস সূত্র জানায়, নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ১৪ জনের মধ্যে বুধবার (২২ মে) তিনজনকে আইওএমের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠানো হবে। বাকিরা এখনো দেশে ফিরতে রাজি না হওয়ায় তাদেরকে আনা হচ্ছে না। তাদের মধ্যে চারজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (২১ মে) দেশে পৌঁছানোর পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে পড়েন ওই ১৫ বাংলাদেশি। বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও র‌্যাব মানবপাচারকারী চক্রের বিষয়ে তথ্য জানতে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পরে ইমিগ্রেশন পুলিশের জেরায়ও পড়েন তারা।

তবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ বুধবার তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক নিশ্চিত করেছে।

বিমানবন্দরে অবস্থানকালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির এক কর্মকর্তার মাধ্যমে দেশে ফেরা ১৫ জনের মধ্যে সোহেল রানার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। হবিগঞ্জের বাসিন্দা সোহেল রানা জানান, গত ২৮ জানুয়ারি স্থানীয় দালাল বুলবুলের সহায়তায় লিবিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন তিনি। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর বুলবুলকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দেয় তার পরিবার। পরে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য আরেক দালালকে ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে হয় আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা।

তিনি আরও জানান, দালালদের সাথে চুক্তি ছিল, লিবিয়া থেকে জাহাজে করে ইতালি নেওয়া হবে এবং চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। তবে লিবিয়ায় নিয়ে প্রায় তিন মাস একটি ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়। গত ৯ মে সন্ধ্যায় লিবিয়া থেকে মোট ৫৭ জনকে একটি নৌকায় তুলে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়।

নৌকাটিতে ৮ জন নারী ও তিন শিশুও ছিল। ১০ মে সারাদিন সাগরে ভাসার পর নৌকায় পানি উঠতে শুরু করে। ভাসতে ভাসতে এক সময় তিউনিসিয়া উপকূলে গেলে স্থানীয় জেলেরা উদ্ধার করে তিউনিশয়ার কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করে।

জেপি/আরএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।