তালিকার অভাবে কেনা যাচ্ছে না ধান
ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত না হওয়ায় ধান কেনা পুরোদমে শুরু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ধান নিয়ে পত্র-পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় লেখালেখি, খবর প্রকাশ এবং বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলনের কারণে কোনো কোনো এলাকায় এমপিরা ধান কেনার নির্দেশনা দিলেও তালিকার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব কৃষক ধান বিক্রি করবেন তাদের এখনও পর্যন্ত জানানোই হয়নি। কোন কৃষক কী পরিমাণ ধান বিক্রি করতে পারবে তাও সংশ্লিষ্ট কৃষকরা এখন পর্যন্ত জানেন না।
এ অবস্থায় রাজশাহীতে এমপিদের নির্দেশে কোনো কোনো এলাকায় কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু হলেও তা ফটো সেশানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। চিহ্নিত কিছু কৃষকের কাছ থেকে ধান নেয়ার পর আবার থমকে গেছে এই কার্যক্রম। কারণ হিসেবে চাষিরা বলছেন এখন পর্যন্ত তাদের তালিকাই তৈরি করা হয়নি। সরকারিভাবে ক্রয় বিলম্বের কারণে ইতোমধ্যে অনেক চাষি তাদের উৎপাদিত ধান কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। কারণ কৃষি শ্রমিকের উচ্চমজুরি ও মহাজোনের ঋণ পরিশোধ, স্কুল-কলেজে পড়ুয়া সন্তানদের বেতন দেয়া, সারের দাম, ওষুধের দাম, পানির দাম পরিশোধ ইত্যাদি ধান কাটার পরে আর কোনো অজুহাত খাটে না।
এর আগে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। সেই ২৫ এপ্রিল পার হয়ে আজ ২২মে। আর দু’দিন পরেই এক মাস পূর্ণ হবে। এখন পর্যন্ত তালিকাই প্রস্তুত করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার চরপাড়া গ্রামের আদর্শ আকিমুদ্দিন শেখ একজন তালিকাভুক্ত কৃষক। এর আগেও তিনি সরকারের কাছে ধান বিক্রি করেছেন। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত (২২ মে) তাকে কিছু বলা হয়নি। তিনি জানেন না এবার সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারবেন কি না।
জাগো নিউজকে আকিমুদ্দিন শেখ বলেন, সরকার যখন কেনবে তখন হয়তো কৃষকের ঘরে বিক্রি করার মতো ধান থাকবে না। কারণ প্রায় এক মাস আগে (এপ্রিল মাসে) ধান কাটা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে চড়ামূল্যে কামলার দাম, সার ওষুধ, পানি সেচের টাকা, মহাজনের ঋণের টাকা সব ধান বিক্রি করেই দিতে হয়েছে। সে কারণে অনেকের ঘরেই বিক্রি করার মতো ধান এখন আর নেই। তিনি বলেন, আমি কিছু ধান রেখে দিয়েছি সরকারের কাছে বিক্রি করার জন্য।
উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কোনো জেলায় ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়নি। যেসব কৃষক ধান চাল দেবে ইউপি চেয়ারম্যানরা এখন পর্যন্ত তাদের তালিকা তৈরি করতে পারেননি। গত বছর গুদামে ধান সাপ্লাই দিয়েছেন এমন একজন কৃষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে (গুদামে) ধান দেয়া আরেক ভোগান্তি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘুষ না দিলে তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ধান ফেরত দেয়। যেমন বলা হয়, ঠিক মতো শুকানো হয়নি, ধানে চিটা-ধুলা আছে ইত্যাদি অজুহাত তোলে। আর ঘুষ দিলে কোনো সমস্যাই থাকে না।
ধান ক্রয়ের বিষয়ে কথা হয় লালমনিরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন অভির সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, পুরোদমে ধান ক্রয় এখনও শুরু করতে পারিনি। কারণ কৃষকের তালিকা পেতে বিলম্ব হচ্ছে। তালিকা হাতে পেলে পুরোদমে ধানক্রয় শুরু করা যাবে।
তালিকার বিষয়ে তিনি বলেন, এনালক তালিকার কারণেই বিলম্ব হচ্ছে। কৃষকদের তালিকাটি ডিজিলাইজড করা গেলে এই সমস্যা হতো না। ধান রোপণের সময়ই ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকের নাম, গ্রাম, কতটুকু জমিতে ধান চাষ করছেন, এর আগে ধান সরবরাহ করেছেন কি-না ইত্যাদি তথ্য দিয়ে ডাটাবেজ করা গেলে এই তালিকা নিয়ে আর ঝামেলায় পড়তে হতো না।
উল্লেখ্য, চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৩ লাখ টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা, আতপ চাল ৩৫ টাকা ও ধান ২৬ টাকা। এবার মোট সংগ্রহের মধ্যে দেড় লাখ টন থাকছে ধান, যা কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কেনা হবে। আর মোট সাড়ে ১২ লাখ টন চাল সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল, দেড় লাখ টন আতপ চাল। বর্তমানে খাদ্য মজুত ভালো রয়েছে। এখন চালের মজুত প্রায় ১৩ লাখ টন।
এফএইচএস/এমএমজেড/জেআইএম