বাবা, তুমি মরে যেও না : আয়লানের শেষ কথা
সামনে একটার পর একটা বিশাল ঢেউ। তারই মধ্যে ভিড়ে ঠাসা শরণার্থী বোঝাই নৌকায় কোনো রকমে বাবার হাত ধরে গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়েছিল আয়লান। দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে ঢেউয়ের দাপট থেকে রক্ষা করতে গিয়ে যখন নিজেই ডুবতে বসেছিলেন আবদুল্লাহ কুর্দি, তখন বাবাকে দেখে চিৎকার করে বলে উঠেছিল খুদে আয়লান, ‘বাবা, তুমি মরে যেও না।’
কানাডার টরন্টোর বাসিন্দা ফাতিমা কুর্দি এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের কাছে এমনটাই জানিয়েছেন আয়লানের এক পিসি। তিনি বলেন, চিরতরে চলে যাওয়ার আগে এই ছিল আয়লানের শেষ কথা।
কান্না ভেজা গলায় ফাতিমা বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ বাঁচার শেষ চেষ্টা করেছিল। এক দিকে দুই ছেলে ও স্ত্রী। আর অন্যদিকে, নিজেকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা। এই দুইয়ের মধ্যে পড়ে যখন হাঁসফাঁস করছিল আবদুল্লাহ, সে সময়ই আয়লান বাবাকে বাঁচানোর জন্য চেঁচিয়ে ওঠে।’
আবদুল্লার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে ফাতিমার। তখনই আবদুল্লাহ বোনকে জানিয়েছেন, আয়লান ও গালিপের হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। যখন উথালপাথাল ঢেউয়ের থেকে বাচ্চাদের আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন, তখনই বুঝতে পারেন যে বড় ছেলে গালিপ আর নেই। ছোট ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখতে পান, আয়লানের চোখ থেকে রক্ত ঝরছে। ওই দৃশ্য দেখে চোখ বুজে ফেলেন আবদুল্লাহ। অন্য দিকে তাকিয়ে দেখতে পান, জলের মধ্যে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন স্ত্রী। আবদুল্লাহর কথায়, ‘সর্বশক্তি দিয়ে আমি ওদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি।’
ফাতিমার আক্ষেপ, ‘দুর্ঘটনার মাত্র দু’সপ্তাহ আগেই আমার সঙ্গে দুই ভাইপোর ফোনে কথা হয়েছিল। ইউরোপ পৌঁছে গালিপকে একটা সাইকেল কিনে দেবে বলেছিল আবদুল্লাহ। কিন্তু তা আর হল না।’
আরএস/এমএস