হাতিরঝিলে ঝুঁকিপূর্ণ সেলফির সঙ্গে বেপরোয়া ড্রাইভিং


প্রকাশিত: ০৪:০৯ এএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বুধবার, বিকেল ৩টা। হাতিরঝিলের তেজগাঁও-গুলশান লিঙ্ক রোডে অবিরাম ছুটে চলেছে অসংখ্য দ্রুতগামী প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেল। কে কার আগে যাবে! ফাঁকা রাস্তায় যানবাহনগুলোর মধ্যে ওভারটেক করার অসুস্থ প্রতিযোগিতা চোখে পড়ে। বিশেষ করে উঠতি বয়সের কিছু তরুণের কানে এয়ারফোন লাগিয়ে লুকিং গ্লাস ছাড়াই মোটরসাইকেল নিয়ে সাঁই সাঁই আওয়াজ তুলে ছুটে চলার দৃশ্য দেখে পথচারীসহ অন্যান্যরা আঁৎকে উঠলেও সেদিকে নূন্যতম ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের।

ঝুঁকিপূর্ণ বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে হালআমলের সেলফি ও গ্রুপ ফটোগ্রাফির নতুন ফ্যাশন। কখনো ফ্লাইওভারের ওপর আবার কখনো নিচের রাস্তায় দাঁড়িয়ে জীবনবাজি রেখে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সেলফি ও গ্রুপ ফটোগ্রাফি চলছে।

Hatir-jhil

সরজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, তরুণ-তরুণিরা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে সেলফি কিংবা বন্ধুদের দিয়ে ছবি তুলছে। আশপাশ বা বিপরীত দিক থেকে দ্রুতবেগে গাড়ি আসতে দেখে দৌড়ে সরে যাচ্ছে। কেউ কেউ পাশ দিয়ে দ্রুতবেগে ছুটে চলা গাড়িসহ ছবি তুলতে বন্ধুদের উদ্বুদ্ধ করছে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে ফটোগ্রাফি করার ফলে যেকোন সময় হতাহত হওয়ার মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০২ একর জমির ওপর প্রায় ২০ হাজার মিলিয়ন অর্থব্যয়ে নির্মিত হাতিরঝিল লিঙ্ক রোডটির উদ্বোধন করেন। ১৬ কিলোমিটার রাস্তার চারিদিকে রয়েছে ছোট-বড় ৮টি ব্রিজ ও বেশ কিছু ওভারপাস। উদ্বোধনের পর থেকেই দৃষ্টিনন্দিত এ হাতিরঝিল প্রকল্পে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসছেন। তবে ইট-পাথরের এ নগরীতে পরিবার পরিজন ও বন্ধুদের নিয়ে একটু বুক ভরে নিশ্বাস নিতে আসার লোকজন সেলফি ও বিপদজনক ফটোগ্রাফি করতে দেখে আঁৎকে ওঠছেন।

Hatir-jhil
 
ইস্কাটনের বাসিন্দা আবদুর রহমান তার স্ত্রী ও সাত বছরের শিশু সন্তান বাধনকে নিয়ে বেড়াতে আসেন। মুক্ত পরিবেশে ওয়াকওয়েতে ছোট্ট শিশু বাধন ফড়িংয়ের মতো এদিক সেদিক ছুটোছুটি করছিল। স্ত্রী নিতু বাধন যেন রাস্তায় চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে বার বার অনুরোধ করছিলেন স্বামীকে।

আবদুর রহমান বলেন, উঠতি বয়সের অনেক তরুণরা কানে এয়ারফোন লাগিয়ে উল্কাবেগে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। নতুন নামি-দামি মোটরসাইকেলের লুকিং গ্লাস কেন থাকে না তা বুঝতে পারি না।

তিনি আরো বলেন, লুকিং গ্লাস না থাকায় পেছন থেকে কে আসছে তা যেমন দেখতে পায় না তেমনি কানে এয়ারফোন থাকার কারণে অন্য যানবাহনের হর্ণও শুনতে পায় না। এটা নাকি হাল আমলের ফ্যাশন! জীবনাবাজি রেখে এ কেমন ধরনের ফ্যাশন বুুঝি না?

Hatir-jhil

সরজমিন পরিদর্শনকালে আরো দেখা যায়, তরুণদের কেউ কেউ বীরত্ব দেখাতে বিজ্রে রেইনবো শেপ যে উচু পিলার রয়েছে সেখানে ঝুঁকি নিয়ে উঠে যাচ্ছেন। এতে অসাবধানতাবশত তাদের উঁচু থেকে নীচে পড়ে হতাহতের ঝুঁকিও রয়েছে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলার কলেজ ছাত্র ইমরান। দামি মোবাইল ক্যামেরা হাতে নিয়ে তেজগাঁও থেকে গুলশান শুটিং ক্লাব যাওয়ার পথে একটি ওভারব্রিজের ওপরে মাঝখানে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিল। পেছন থেকে দ্রুতবেগে গাড়ি  আসছিল আর সেলফি তুলে বার বার সরে দাঁড়াচ্ছিল।

Hatir-jhil

ঝুঁকিপূর্ণভাবে ফটোগ্রাফি কেন করছে জিজ্ঞেস করলে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে হাসতে হাসতে ইমরান বলে, একটু আলাদা টাইপের সেলফি করতেই একটি ঝুঁকি নিচ্ছেন। তবে গাড়ি আসছে কি-না তা দেখেই তা করছেন।

# মরণ ফাঁদ যেন হাতিরঝিল!
# রাতের হাতিরঝিল : অপরাধীদের দৌরাত্ম্যে হার মানছে যাবতীয় সৌন্দর্য
# হাতিরঝিলে গলা কেটে কলেজছাত্রকে খুন

এমইউ/আরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।