ঘোষণাতেই প্রতিশ্রুতির মৃত্যু সাঈদ খোকনের


প্রকাশিত: ০৮:৫৯ পিএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ঘোষণাতেই নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি শেষ। দায়িত্ব গ্রহণের চার মাস পার করলেও এখনো দৃশ্যত কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম দেখাতে পারেননি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। বরং গত সপ্তাহে ভোগান্তির নতুন মাত্রা দেখেছে ঢাকাবাসী। পুরো রাজধানী যেন অচল হয়ে যায় ওই সময়টাতে। যানজট আর জলাবদ্ধতার এমন চিত্র কঠিন সমালোচনায় ফেলে দেয় নতুন মেয়রদের।

গত ৬ মে শপথ নিয়ে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেন ঢাকার নতুন দুই মেয়র সাঈদ খোকন ও আনিসুল হক। সে হিসেবে চার মাস পার হচ্ছে তাদের।

অবশ্য সাঈদ খোকন বলছেন, ঢাকা শহরের যে জলাবদ্ধতা, সেটা আজকের সমস্যা নয়। এটা দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাহীন সমন্বিত উদ্যোগের ফসল। যেমন বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা ভুল ছিল। এছাড়া যেসব জায়গা দিয়ে পানি নেমে যাবে, সেখানে হাউজিং ব্যবসায়ীরা বাড়ি নির্মাণ করে পানি নামার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। ঢাকা শহরে যে ড্রেন আছে, সেগুলো ১৪টি সংস্থার নিয়ন্ত্রণে। একটির সঙ্গে আরেকটির সমন্বয় নেই। সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি খুবই জটিল। এর জন্য সময় প্রয়োজন। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। এর আলোকে একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করবো।

তিনি আরো বলেন, তিন মাস বা চার মাস কোনো বিষয় না। একটা স্বল্পমেয়াদি সমস্যা সমাধানের কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। আরো রয়েছে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। স্বল্পমেয়াদির মধ্যে আছে রাস্তাগুলো সমান্তরাল করা, ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখা, যে ড্রেনগুলো বন্ধ আছে, সেগুলো খুলে দেয়া ইত্যাদি। এসব কাজ ঠিকমতো করা হলে শতভাগ না হলেও ৩০-৪০ ভাগ সমস্যার সমাধান হবে। আশা করি এতে জলাবদ্ধতা কমে যাবে। তাতে হয়তো দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে। এ সময়টুকু তো দিতেই হবে।

যানজট :
যাত্রী পরিবহনের অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা সত্ত্বেও ঢাকার রাজপথে যানজট নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মঘণ্টার একটা বিপুল অংশই যানজটের কারণে অপচয় হচ্ছে। যানবাহন ও জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়বে- এটা মনে রেখেই ঢাকা দক্ষিণের দুই অংশে অর্থাৎ পুরনো ঢাকা এবং নতুন ঢাকার সমন্বিত গণপরিবহন, সড়ক ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপদ পথচলার ব্যবস্থা করা জরুরি।

এমন পরিস্থিতে মেট্রোরেল, এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ে, মোহাম্মদ হানিফ সেতুর মতো আরো অধিক সংখ্যক দোতলা, তিনতলা উড়াল সেতু গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগে পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে, এ প্রতিশ্রুতি সাঈদ খোকনের। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, এসবের কোনো উদ্যোগ নেই। সরকার নতুন দুটি মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেয়ার চিন্তা করছে বলে জানা গেছে সড়ক ও সেতু বিভাগ সূত্রে।

এদিকে, গণপরিবহনে নারীদের নিরাপদ চলাফেরা, নারীদের বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করা এবং পুরনো ঢাকার রাজপথে চলার উপযোগী বিশেষ ধরনের যাত্রী পরিবহন বাস উদ্ভাবন করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন এই নগর পিতা। তাতেও কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি গত চার মাসে।

দূষণ আজও নিত্য সঙ্গী :
কোনো দূষিত পানি ও বর্জ্য যাতে বুড়িগঙ্গায় না পড়ে তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হবে বলে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়ে সাঈদ খোকন পেয়েছেন বাহবা। কিন্তু গত চার মাসে এব্যাপারে কোনো উদ্যোগই নেননি তিনি।

জলাবদ্ধতা :
বৃষ্টিতে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় এবং দক্ষিণ ঢাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মানুষ জলবন্দি না হয় তার জন্য উপযুক্ত জলনিকাশী ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। কিন্তু কিছুই করতে পারেননি মেয়র। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করা, রাস্তাঘাট, লোকালয়ের যত্রতত্র যেন বর্জ্য পড়ে না থাকে সে লক্ষ্যে ব্যাগ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছেন নতুন মেয়ররা। তবে সেটিও পর্যাপ্ত নয় বলে জানা গেছে।

নারীদের জন্য শৌচাগার :
সাঈদ খোকনের নির্বাচনী ইশতেহারে জানানো হয়, নারীদের জন্য ঢাকা দক্ষিণে পর্যাপ্ত সংখ্যক গণশৌচাগার বা পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। কিন্তু গত চার মাসে একটিও এধরনের শৌচাগার করা হয়নি।

ডিজিটাল মহানগরী :
অভিনব এই ঘোষণাও দেখেনি আলোর মুখ। অথচ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে তাল মেলাতে দিয়েছিলেন এই প্রতিশ্রুতি। প্রতিটি ওয়ার্ডে এক বা একাধিক তথ্যকেন্দ্র খোলার কথা রয়েছে তার।

এসএ/একে/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।