বখাটে রাহুলকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রেরণ
হবিগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আটক বখাটে রুহুল আমিন রাহুলকে (১৫) গাজীপুরের টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ এবং শিশু আদালতের বিচারক মো. আতাবুল্লাহ এ নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় তাকে নিয়ে রওনা দেয় পুলিশ।
এর আগে বেলা দেড়টায় তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে বিকেল সাড়ে ৫টায় আদালতের বিচারক মো. আতাবুল্লাহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সময় না দিয়ে তাকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আইনজীবী ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন জাগো নিউজকে জানান, যে ধারায় মামলাটি দেয়া হয়েছে তার মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের ধারায় বলা হয়েছে যৌন নিপীড়ন। সেটি জামিন অযোগ্য ধারা। তথ্য প্রযুক্তির আইনের ধারাটি সংযুক্ত করার কারণ হচ্ছে ভিডিওটি ফেসবুকে দেয়ায় তার সামাজিক মানহানি হয়েছে। এটিও অজামিনযোগ্য ধারা।
মামলাটি বিশেষ আদালতে বিচারযোগ্য। যেহেতু সে শিশু তাই শিশু আইনে বলা আছে, তার বিচার শিশু আদালতে হবে। তার জন্য আলাদা চার্জশিট দিতে হবে। এখানে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০/৩০ ধারা দেয়া হয়েছে তাতে সর্বনিম্ন শাস্তি তিন বছর এবং সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড। আবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ৫৭/২ ধারা দেয়া হয়েছে তার সর্বনিম্ন শাস্তি পাঁচ বছর এবং সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড।
এ ব্যাপারে সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বিভিন্ন সময় নানান রকম তথ্য দিচ্ছে। তা বিভ্রান্তিকর মনে হচ্ছে। যেহেতু সে শিশু তাই তাকে রিমান্ডে নেয়ার বিধান নেয়। তাই জেলা আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সময় চাওয়া হয়েছিল। তার দেয়া অসম্পূর্ণ তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, তার কঠোর শাস্তি ও জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ। পাশাপাশি তারা ছাত্রীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতের পথ নিরাপদ রাখারও দাবি জানান।
জেলা পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট নারী নেত্রী তাহমিনা বেগম গিনি বলেন, এখন গ্রেফতারের পর কি হবে। আমাদের একটাই কথা কোনো রকম আপোস হতে পারবেনা। অন্তত উদাহরণমূলক হলেও তার শাস্তি দাবি করছি। যেন দ্বিতীয়বার আর কোনো ঘটনা ঘটানোর সাহস কেউ না পায়। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানায় যেন তারা কোনো রকম মুচলেকা দিয়ে অপরাধীদের না ছাড়েন।
তাকে গ্রেফতার করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীম আক্তার চৌধুরী জানান, শুধু গ্রেফতার হলেই চলবেনা। তার যেন একটি সমুচিত শিক্ষা হয়। কোনোভাবেই যেন সে আইনের ফাঁক দিয়ে না বেরিয়ে আসে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মেয়েরা যাতে নিরাপদে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে পারে। এ জন্য বিশেষ করে স্কুল শুরুর আগে এবং ছুটির পর যেন পুলিশি টহল জোরদার করা হয় সে দাবি জানান তিনি।
ওই স্কুলছাত্রীর বাবা মামলার বাদি মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে রাহুল রাস্তায় যে আচরণ করেছে আর যেন কেউ অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন আচরণ না করে সেজন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। এছাড়া তার সহযোগিদেরও শাস্তি চায়।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এআরএ/আরআইপি